প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, July 23, 2025

ভেসে যাওয়া ডিঙি [৩য় পর্ব] | পারমিতা দে (দাস)

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১২তম সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা দে (দাস)
 
ভেসে যাওয়া ডিঙি
[৩য় পর্ব]

"পোয়াতি শরীরটা বড় ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হরি চোখ সরিয়ে নিল। আকাশের দিকে তাকাল। একটা বিড়ি ধরাল। রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশের একপাশটা গাঢ় অন্ধকার। হরি জানে এই অন্ধকারটুকু ওর।"


পূর্বানুবৃত্তি মুনিয়ার সাথে ভজার প্রেমের কানাঘুষো খবর পেয়েই মুনিয়ার বাবা বাবলু ধর মুনিয়াকে সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল পাশের গ্রামের তপেশ মালাকারের সাথে। সে পেশায় জেলে। তারপর
 

মাসখানেক পর এক সকালে লক্ষ্মী রান্না করছে। বাইরের কাঠের দরজায় কে যেন খড়খড়িটা জোর জোর টানছে। চার মাসের কাঁচা পোয়াতি লক্ষ্মী চলাফেরা এখন খুব সাবধানে করে। সে ধীরে ধীরে আসতে আসতে মুখে বলতে লাগল

"আসছি বাপু আসছি। সবুর করো।" খুলেই দেখে হরি লাল। দেখেই গজগজ করে উঠল লক্ষ্মী,
-আবার এসেছে আপদ
তবে আজ হরি কিছুই বলল না। লক্ষ্মীও বিষয়টা খেয়াল করল। আজ হরিকে অন্যরকম লাগছে। পরনে লুঙ্গি আর ছেঁড়া গামছা গলায় নিয়ে যে হরিকে লক্ষ্মী দেখে এসেছে এতকাল সে আজ একটা শার্ট আর প্যান্ট পরেছে। দেখে মনে হচ্ছে কারোর থেকে ধার করা। উস্কোখুস্কো কাঁচাপাকা চুলগুলো আজ সমানভাবে আঁচড়ানো। এক গাল দাড়ি আজ পুরো পরিষ্কার। লক্ষ্মী হরির মুখটা দেখেই ভেবেছিল দরজাটা দিয়ে দেবে কিন্তু আজ দিল না। দিতে পারল না। হয়তো মায়া হল। কিংবা করুণা। কিছু একটা হলো। লক্ষ্মী বলল,
-কী চাই তোর? তুই আবার এসেছিস এখানে?
হরি শান্ত গলায় বলল,
-চলে যাব। আর কোনোদিন তোকে জ্বালাতে আসব না। আমি আজই শহরে চলে যাচ্ছি। ওখানে একটা কারখানায় লেবারের কাজ পেয়েছি। পাঁচ হাজার টাকা মাইনা।
লক্ষ্মী অবাক হয়ে চেয়ে রইল হরির মুখের দিকে। মনে মনে ভাবল এত টাকা মাইনের চাকরি কে দেবে হরির মতো মুখ্যু নির্বোধ মানুষকে। লক্ষ্মী কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল,
-যা যা যেখানে যাচ্ছিস যা। তা এখানে এসেছিস কেন?
হরি বলল,
-ছেলেমেয়ে দুটোকে একটু ডেকে দে-না ওদের দেখে চলে যাব। আর কোনোদিন বাবা হিসেবে ওদের কাছে আসব না।
লক্ষ্মী আজ প্রতিবাদ করল না। হেদু আর বুল্টিকে ডেকে দিল। ছেলেমেয়ে দুটো বাবা বাবা করে এসে হরিকে জড়িয়ে ধরল। আজ হরি খালি হাতে আসেনি। দুটো লেবু লজেন্স এনেছে দুজনের জন্য। ছেলেমেয়েকে আদর করে হরি লক্ষ্মীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমি তোকে অনেক জ্বালিয়েছি। অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি। আর কোনোদিন তোকে জ্বালাতে আসব না। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস। আর এই সময়ে সাবধানে থাকিস।
লক্ষ্মী মাথা নিচু করে ফেলল। হরির কথাগুলো আজ একবারে মনটা তোলপাড় করে দিল লক্ষ্মীর। হরির প্রতি যত অভিমান রাগবিদ্বেষ সব গলে জল হয়ে গেল মুহূর্তে। হরি বেরিয়ে গেল ছেঁড়া ছেঁড়া একটা কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে। লক্ষ্মী দরজায় দাঁড়িয়ে নিস্পন্দ হরির চলে যাওয়া দেখতে থাকল। উঠানের একপাশে হেমন্তের পাতা ঝরা স্থির মেহগনি গাছটার মতো
হরি ভজার সাথে এগিয়ে যেতে যেতে পিছনে ফিরে একবার দেখল লক্ষ্মী ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পোয়াতি শরীরটা বড় ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হরি চোখ সরিয়ে নিল। আকাশের দিকে তাকাল। একটা বিড়ি ধরাল। রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশের একপাশটা গাঢ় অন্ধকার। হরি জানে এই অন্ধকারটুকু ওর। ওর আকাশে কোনোদিনই আলো ফুটবে না, চাঁদ উঠবে না। শুধুই অন্ধকার, মেঘ আর বৃষ্টি...
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)