ধারাবাহিক
গল্প
ডঃ নিতাই
ভট্টাচার্য
ডিভোর্স
প্রসঙ্গে হরিলাল
[২য় পর্ব]
"একজন ফুরফুরে মেজাজে ঘুরছে। অন্য জনের বুকে কালো মেঘ। এ বলে ডিভোর্স "ভাল" ও বলে বিচ্ছেদ "যন্ত্রণা" আসলে কোনটা? ভেবে ভেবে রাত কাবার, নো কনক্লুশন।"
পূর্বানুবৃত্তি হরিলালের লেখা
সহজ সরল সুন্দর সরেস স্বাভাবিক সাবলীল সুললিত সহজবোধ্য সমাজ বদলকারী বাস্তববাদী
মানব কল্যাণকারী এবং, এবং অবশ্যই একটা ইউনিক ফিলোসফি আছে। সমাজের
সবদিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি। কোথাও অন্যায় অবিচার বা অধঃপতন দেখলেই গর্জে ওঠে হরিলাল,
অবশ্যই ফেসবুকের পাতায়। তারপর…
পাড়ার রতনদারও বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে মাসখানেক হলো। বছরদুয়েক আগে রতনদার স্ত্রী হঠাৎ করে পালিয়ে গেল অন্য পাড়ার এক দর্জির সঙ্গে। তার ছমাস পর উকিলের চিঠি এলো রতনদার হাতে, আই ওয়ান্ট ডিভোর্স, মুক্ত করো মোরে
ওহে পাষাণ হৃদয়, দাও খুলে লৌহ শৃংখল। তারপর...। মুষড়ে পড়েছে মানুষটা। একদিন হরিলালকে
ডেকে বিমর্ষ রতনদা বলে, "সুযোগ পেলে কখনও লিখিস ভাই,
বিচ্ছেদ বড় যন্ত্রণার সে বড় বেদনার।" পাশেই ছিল পাড়ার দীনু
ঘোষ। ফ্যাক ফ্যাক করে খানিক হেসে দীনু বলে "ওরে রতন ভাগ্যবানের বউ পালায়
অভাগার পালায় গোরু, নতুন করে বিয়ে করে নে নয়তো লোকে নানা
কথা বলবে। আর তুইও আবার পরের দুয়ারে উঁকি...।" দীনুর কথা শুনে ভীষণ কষ্টের আঁকিবুঁকি ফুটে উঠেছিল রতনদার মুখে।
সে রাতে ভয়ংকর দোলাচলে
পড়েছিল হরিলাল। অতনুবাবু আর রতনদার কথার মধ্যে কেমন কনট্রাডিকসন! আচরণেও তাই।
একজন ফুরফুরে মেজাজে ঘুরছে। অন্য জনের বুকে কালো মেঘ। এ বলে ডিভোর্স
"ভাল" ও বলে বিচ্ছেদ "যন্ত্রণা" আসলে কোনটা? ভেবে ভেবে
রাত কাবার, নো কনক্লুশন। এদিকে লেখা জমা দেবার দিন ফুরিয়ে
আসছে। সম্পাদক মশাই তাড়া দেন, আপনার মূল্যবান লেখাটা দিন
হরিলালবাবু। লেখা শেষ করতে হিমশিম খায় হরিলাল। অতঃপর...।
হরিলাল সোশ্যাল মিডিয়াকে
ভরসা করে বড্ড। আফটার-অল সমস্ত গুণী মানুষরা লেখালিখি করেন এই প্লাটফর্মে। সে কবিতাই
হোক বা প্রবন্ধ। গল্প হোক বা মুক্তগদ্য। অনুগল্প পরমাণু গল্পও লিখছে কত গুণীজন।
শুরু হয় ডিভোর্স নিয়ে লেখাপড়া, ফেসবুকের শিরায় শিরায়
অনুসন্ধান। দিন রাত। রাত দিন। ডিভোর্সের ভাল-মন্দ। বিবাহবিচ্ছেদ কেন ও তার
প্রতিকার। ডিভোর্স, এখনই সাবধান হোন। এমন রাশি রাশি লেখা
পড়ে ফেলে হরিলাল। এক জ্যোতিষ লিখেছে বিবাহবিচ্ছেদ আসলে বিবাহের পর নয়, জন্মকুণ্ডলীতে। আপনার জম্মের সঙ্গেই সে অনিবার্য পরিণতি নির্ধারিত হয়েছে।
সঠিক জন্ম সময় সাল সঙ্গে নিয়ে আসুন, প্রতিকার গ্যারান্টি।
নিচে সেই অ্যাস্ট্রোলজারের ফোন নম্বর। পেজটার স্ক্রিনশট নিয়ে রাখে হরিলাল। মনে মনে বলে ব্যাটা বুজরুক। এক তন্ত্র সাধকের মতামতও
পায় হরিলাল। মন্ত্রপূত হরীতকী বালিশের নিচে রাখলেই অশান্তির
সমাপন। জীবন মধুর। চলে আসুন। তারও ফোন নম্বরটা নোট করে হরিলাল। মুখে বলে ফালতু।
বোগাস। ডিভোর্স নিয়ে এইসব ব্যাপার মনে লাগে না, স্বাভাবিক।
হরিলালের দর্শন আলাদা। অতএব ভাবনায় ডুব দেওয়া। "ডুব দে রে মন..."।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment