বাতায়ন/প্রবন্ধ/৩য় বর্ষ/১৪তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির
সান্যাল সংখ্যা | প্রবন্ধ
হীরক
বন্দ্যোপাধ্যায়
মহাজাগতিক
কবি আলোক সরকার আর তার অনন্য কবিতা
[১ম পর্ব]
"একটি বাড়ি রয়েছে, তার দরজা আছে। আমার কাজ বেরিয়ে যাওয়া। বেরিয়ে যাওয়াটাই আমার কাছে সত্য। একটা লক্ষ্য নিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে। বেরিয়ে যাওয়াটাই শুধু আছে।"
বাংলা কবিতার ভুবনে কবি আলোক সরকার এমন এক মহাজাগতিক নক্ষত্র যার আপাত সরল লেখাগুলির মাঝে লুকিয়ে থাকে নির্মাণ ও বিনির্মাণের সুষমা। একবার পড়ার পর এক মোহ তৈরি হয়, পরে দিনে-দিনে শব্দগুলি সম্পর্ক অন্বেষা সৃষ্টি করে। নৈর্ব্যক্তিক এক অন্বয়সাধন নির্লিপ্ততা অথচ চিরজ্বলমান। মানুষের যেমন অতীত ভবিষ্যৎ দু’দিকে ছড়িয়ে থাকে ঠিক তেমনই তার কবিতায় ক্রমান্বয়ে নিস্পৃহ বিস্তৃতি রহস্যময়তায় ভরে ওঠে।
আচ্ছা দেখা যাক কেমন সে
নির্লিপ্তি:
...একদিন আর কোনো দুঃখই পাবো না। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে এসে /
দামী ইজিচেয়ারের ভিতরে নিজেকে সঁপে দিয়ে / বেয়ারার হাতে ঠান্ডা জল খাব।
একদিন অত্যন্ত কৌতুক বলে মনে হবে / এইসব কবিতা, বিনিদ্র রাত্রি,
শিল্পের
গভীর গভীরতম মানে / যেমন এখন কুড়ি বছরের প্রেম বহুদিন পর ফিরে এসে / চুলের ভিতরে
হাত রাখলেও শুধুমাত্র মমতা ঘনায়, / কোনো উত্তেজনা নয়, শিহরণ নয়, সেইরকম সহজ আঙুলে /
একদিন প্রিয় কবিতার বই খুলে পড়ব । একদিন আর কোনো / দুঃখই পাবো না অন্ধকারে একটি সবুজ
পাতা ঝরে গিয়েছিল বলে।
একদিন # স্তব্ধলোক
এইসব কবিতার বীজ পাঠককে শুধুমাত্র
আলোড়িত করে না, আরোগ্য দেয়। অবশ্য
একথা ঠিক নিশ্চিত যে, এইসব কবিতা পংক্তি
জীবন এবং জীবন বিষয়েই বলা তবু স্বনির্মিত স্বাতন্ত্র্যতা যা বিশ্বাস নম্র আভরণ
জাগ্রত চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। আলোক সরকারের কাছে কবিতা কী এ প্রসঙ্গে
প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:
...ধরা যাক, একটি বাড়ি রয়েছে, তার দরজা আছে। আমার কাজ বেরিয়ে যাওয়া। বেরিয়ে যাওয়াটাই আমার
কাছে সত্য। একটা লক্ষ্য নিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে। বেরিয়ে যাওয়াটাই শুধু আছে। সে
যেখানে যেতে চায় তার একটা আগ্রহ আছে, প্রাপ্তি আছে, আনন্দ আছে। দরজা আছে কী নেই, তার লক্ষ্য নয়। অপরিকল্পনার দিকে যাওয়াটাই শিল্প। আর এসব নিয়েই ঘোর, ঠিক ঘোর নয়, নিবিষ্টতা, এই নিবিষ্টতাই আমার কবিতা।...
আসলে শব্দের গঠনবিন্যাস এবং
ম্যাজিকায়ন আলোক সরকার-এর কবিতার ইউএসপি।
...যতদিন সে না ফেরে / আমাদের সব খেলা বন্ধ। / উৎসব বন্ধ /
হাওয়াকে বলব তোমাকে আর পাতা / কাঁপাতে হবে না। / তুমি সেই দেশে যাও /
যেখানে সে আছে। / ফুলকে বলব / তোমার আর এ দেশে ফুটতে হবে না / তুমি সেই দেশে ফোটো /
যেখানে সে আছে / আমরা কারো ডাকে ঘরছাড়া হব না / আমরা কোনো গান শুনব না / কেবল
দুপুর যখন চুপচাপ হবে / আমরা এমন একটা সুর বাজাব / যা ঘর ছেড়ে ওপরে, আরো ওপরে / মলিন করুণ সুরে সারা আকাশ / ভরে দেবে, বাতাস ভরে দেবে / সেই দেশ ভরে দেবে / যেখানে সে আছে ।...
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment