প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Thursday, August 7, 2025

সোনার খাঁচা | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
সোনার খাঁচা

"স্ত্রীকে যে সম্মান দিতে হয় তা তোমরা জান না স্ত্রী মানেই তোমাদের সম্পত্তিতার নিজস্ব অস্তিত্ব কিছু থাকবে না তার কোন মতামত সংসারে খাটবে না।"


অনল অবাক হয়ে গেল তিয়াসা তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলছে, সে ডিভোর্স চায় কিন্তু কেন? আজ এতদিন পর এই ভাবনাটা তার মনে এল? হ্যাঁ একথা সত্যি তিয়াসাকে এবাড়িতে প্রায়ই অপমানিত হতে হয় তার মা তো যথেষ্ট কারণেই অপমান করেন, সে-ও প্রায়ই অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে ফেলে অবশ্যই তখন সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। তারপর নিজের ভুল বুঝতে পেরেও কোন সরি বলার প্রয়োজনবোধ করে না এতে সরির কী আছে? সব স্ত্রীকেই তার স্বামীর এরকম অপমান সহ্য করতে হয়, তা বলে ডিভোর্স? তিয়াসাকে সে যে সুখস্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে, সে তার কোন মূল্যই দিতে পারে না।


মুখে সবসময় বিষন্নতা লেগেই আছে তাই তো সে আজ সকালে অনেক দুঃখে বলে ফেলেছিল,
-দুঃখ যাদের বিলাস তাদের কেউ কোনদিন সুখী করতে পারে না।
তিয়াসা আজ প্রথম তার মুখের ওপর কথা বলেছে,
-তোমাদের সংজ্ঞায় সুখ কী? শুধুই দামি বাড়ি, গাড়ি আর স্বামীর সাথে মাঝে-মাঝে দামি হোটেলে ডিনার করতে যাওয়া ব্যস এইটুকু? এর বাইরে আর কিছু ভাবতে পার না?
-এর বাইরে আবার কী থাকতে পারে? তোমার ওই পেটি স্কুলে চাকরি বা কলেজে পড়ানো? তারজন্য ট্রামে-বাসে ঝুলে সময়মতো হাজিরা দেওয়া, আমার স্ত্রী হিসেবে সেটা আমার সম্মানে লাগে বই-কি?
-এই ‘আমার স্ত্রী কথাটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তোমাদের চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব স্ত্রীকে যে সম্মান দিতে হয় তা তোমরা জান না স্ত্রী মানেই তোমাদের সম্পত্তি তার নিজস্ব অস্তিত্ব কিছু থাকবে না তার কোন মতামত সংসারে খাটবে না শুধুই স্বামীর তালে তাল মিলিয়ে তাকে চলতে হবে তাই না?
অনল প্রথম থতমত খেল তার শান্ত ভীরু স্ত্রীর এমন জোড়াল বক্তব্যে। ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল,
-তুমি কী চাও? কোথায় তোমার অভাব আমি রেখেছি?
-আসল জায়গাটাই তো কেড়ে নিয়েছ, আমার স্বাধীনতা আমার জীবনের খোলা আকাশটাকে বন্দি করে তোমার মুঠির মধ্যে রেখে দিয়েছ দীর্ঘদিন ধরে তোমাদের তালে তাল মিলিয়ে চলতে-চলতে আমি ক্লান্ত, বিধ্বস্ত আমি সত্যি মুক্তি চাই নিজের মতো করে বাঁচতে চাই। আমার সন্তানদের পর্যন্ত আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছ, পাছে বাংলা মিডিয়ামে পড়া মায়ের কাছে থেকে তোমাদের তথাকথিত এটিকেট না শিখতে পারে আমি তো নিঃস্ব হয়ে বেঁচে আছি একটা যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো।
অনল তখনকার মতো ওকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,
-এখন আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, ফিরে এসে তোমার বক্তব্য শুনব।
অনল ভেবেছিল সাময়িক অভিমান থেকে বলছে হয়তো কাল রাতের খারাপ ব্যবহারের কথা মনে রেখে। অনলই বা কী করবে? একটা কর্পোরেট অফিসের জেনারেল ম্যানেজার সে তাকে ক্লাব-পার্টি এসব করতেই হয় এগুলো যদি মেনে নিতে না পারে তো অনলের কিছু করার নেইএকথা সে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়। টিপিকাল মধ্যবিত্ত মেন্টালিটি কেউ যদি আঁকড়ে বসে থাকে তবে তার কী করার আছে! স্বামীর তালে তাল দিয়ে হাসিমুখে চলাটাই স্ত্রীর ধর্ম, এটাও ওকে বুঝতে হবে।
রাতেরবেলায় এসে দেখে তার সব ভাবনাকে ওলট-পালট করে দিয়ে তিয়াসা চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হাতে একেবারে কোর্ট-পেপার সই করে ধরিয়ে দিয়েছেঅনলের অবাক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তিয়াসা বলল,
-শুধু ক্লাব-পার্টিই আধুনিকতার একমাত্র পথ নয়, তার সাথে-সাথে মনটাকেও আধুনিক করতে হয়। তোমার মন তো সেই পুরানো অন্ধবিশ্বাসে ভরা স্ত্রী মানেই সে স্বামীর সম্পত্তি, তার আর কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না এখনও তুমি সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই অঙ্গ হয়ে পড়ে আছ সেই অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরোতেই পারছ না কিন্তু আমি একজন স্বাধীন মানুষ, তোমার এই দমননীতি মেনে নিতে-নিতে ক্রমশ নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছি এবার আমি একটু স্বাধীন হয়ে নিজের মতো বাঁচতে চাই। পেপারটা সই করে দিও আর ভয় নেই আমি কোন খোরপো দাবি করব না নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা আমার আছে।
অনল অবাক হয়ে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে বসে থাকল তাহলে কি তার এতদিনের বিশ্বাস চিন্তা সব ভুল ছিল? হয়তো ছিল দমন করাটা তার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, এবং স্ত্রীর আলাদা কোন মতামত থাকতে পারে সে ভাবতে শেখেনি তাইবলে সে আধুনিক নয়? নিজেই নিজেকে বিচার করে যাচ্ছে তার এতদিনের অন্ধবিশ্বাসে এক চরম আঘাত হেনে তিয়াসা বেরিয়ে গেল।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)