প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

তৈমুর খান সংখ্যা | মগজ ও অঙ্গ

বাতায়ন/ তৈমুর খান সংখ্যা/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/ ৩২তম সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ , ১৪৩২ তৈমুর খান সংখ্যা | সম্পাদকীয়   মগজ ও অঙ্গ "অপরিসীম মেধ...

Tuesday, November 25, 2025

মউ [১৩তম পর্ব] | অজয় দেবনাথ

বাতায়ন/ধারাবাহিক উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৩৪তম সংখ্যা/২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
 
মউ
[তম পর্ব]

"শম্ভু দাস তাকে খুব ভালবাসতেন ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন। কেউ কেউ তাকে কেদারনাথ বলেও জানে। বরানগরের একটা সাহিত্যসভায় আলাপ হয়েছিল। সেই থেকেই সম্পর্কটা টিকে ছিল।"

 
পূর্বানুবৃত্তি চোখ বন্ধ করে, কানে হেড-ফোন গুঁজে গানটা একবার শুনেই গেয়ে ফেলল। সুখ মুগ্ধ হয়ে গেল। ওদিকে সুখের আদর্শ কিংবা মিড্‌ল-ক্লাস মেন্টালিটি রুখতে পারেনি তার বিশ্বাস। শুভ্রা আঁতকে উঠল যন্ত্রণায়। রক্ত গড়িয়ে এল গিরিপথ বেয়ে। মুক্তির রক্ত, শিকল ছেঁড়ার রক্ত, পরম সুখের সতীত্ব বিসর্জনের রক্ত তারপর…

সেদিন যখন সুখ শুভ্রার সঙ্গে রমণ করছে, বাড়ির কথা একবারও মনে আসেনি। মনে আসেনি মায়ের কথা। সে নিজেও তাতে কম আশ্চর্য হয়নি। মায়ের সুখ অন্ত প্রাণ, তবু মায়ের কথা একবারের জন্যেও মনে এল না কেন! মনে মনে কষ্ট পেয়েছে, অনুশোচনা হয়েছে। তখন মা, কমলামাসিরা মানে গ্রামের প্রায় সবাই স্কুলবাড়ির দোতলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। জল নেমে গেলে প্রায় সপ্তাহখানেক পরে সবাই যে যার বাড়ি ফিরেছে। সুখ অনেক পরে জেনেছে খবরের কাগজ পড়ে। তারা টিভি দেখতেই পারত। খবর দেখলেই সব হয়তো জানতেও পারত কিন্তু তারা তখন দুজনেই দুজনেতে মুগ্ধ। প্রশ্ন করেছে নিজেকে, সে কী স্বার্থপর, বেইমান? পর-মুহূর্তে মনে হয়েছে হয়তো এটাই প্রেমের ধরণ, যৌবনের ধর্ম। কিন্তু, তবুও মায়ের কথা, বাড়ির কথা মনে পড়া উচিত ছিল না তার! নিঃসংশয় হতে পারেনি আজও। এখনও কথাটা মনে পড়লেই কেমন একটা অপরাধবোধে ভুগতে থাকে, ভিতরে অনবরত কুড়ে-কুড়ে খায়। নিজেকে বড় স্বার্থপর মনে হয়।
 
এইসব স্মৃতি রোমন্থন করতে করতেই পৌঁছে গেল তার গন্তব্যে…
 
১৭
শম্ভু দাসের স্মরণসভা। সভা তখনও শুরু হয়নি, তোড়জোড় চলছে। শম্ভু দাস সাহিত্যে নিবেদিত প্রাণ। সুখ ভেবেছিল আসবে না। জানিয়েও দিয়েছিল অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা পত্রিকার অন্যতম সহ-সম্পাদক কুমারদাকে। এত দূর থেকে যাওয়াটাও একটা ব্যাপার, যদিও অনুষ্ঠানটা শিয়ালদার ‘কৃষ্ণপদ মেমোরিয়াল হল’-এ হওয়ায় একটাই সুবিধা অনুষ্ঠান শেষে দূরের মানুষের ফিরতে বিশেষ অসুবিধা হবে না। অবশ্য ‘ল্যাংটার নেই বাটপারের ভয়’, বাড়িতে তার মা ছাড়া আর কেই-বা আছে, যখন খুশি গেলেই হল। সে-ও যৌবন বয়স থেকে জীবনসংগ্রামে সম্পূর্ণ একা লড়াই করতে করতে এখন পোড়া কাঠের মতোই সিজনড্‌ হয়ে গেছে। তবুও শেষপর্যন্ত না এসে পারেনি।
 
শেষ শ্রদ্ধা জানাবে সবাই, তাকেও জানাতে হবে। সুখ ভেবে আশ্চর্য হয় এভাবেও শ্রদ্ধা জানানো যায়, তাও শেষ শ্রদ্ধা! যাকে শ্রদ্ধা জানানো হবে তিনি থাকার হলে অন্তরেই আছেন, যার যার মতো করে, বাইরের আড়ম্বরের কী প্রয়োজন! তবু…
 
শম্ভু দাস তাকে খুব ভালবাসতেন ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন। কেউ কেউ তাকে কেদারনাথ বলেও জানে। বরানগরের একটা সাহিত্যসভায় আলাপ হয়েছিল। সেই থেকেই সম্পর্কটা টিকে ছিল। সব মাসে সম্ভব না হলেও প্রায় নিয়মিতই সুখ তার ঘরোয়া মাসিক সাহিত্যসভায় যেত। লেখা দিত নিয়মিত। খুব যত্নের সঙ্গে পত্রিকাটা করতেন শম্ভুদা।
 
শম্ভুদার একটা ব্যাপারই ভাল লাগত না সুখের, সুখ চাইত সবসময় মঞ্চে না হলেও মঞ্চের কাছাকাছি থাকতে, শম্ভুদার কাছাকাছি থাকতে। কিন্তু শম্ভুদা মহিলা কবিদের সঙ্গ বেশি পছন্দ করতেন। এমনকি ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিগুলোতেও মহিলাদেরই প্রাধান্য। যেন বাকিরা অপাঙ্‌ক্তেয়। অবশ্য দোষেগুণেই মানুষ। আর সাধারণত কবি-সাহিত্যিকরা একটু বেশিই নারী ঘেঁষা হন। সে রবীন্দ্রনাথ নজরুল থেকে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত। অবশ্য মাইকেল মধুসূদন, শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা আরও অনেকেরই কথা আলাদা কিন্তু তাদেরও অন্য আসক্তি ছিল।
 
ফোনে শম্ভুদার সঙ্গে নানান কথা হত। প্রথম দিকে খুবই ঘনঘন। পরে সুখ নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ফোন করা কমে গিয়েছিল, দুজনের তরফ থেকেই। তবু মাসে অন্তত একবার কথা হতই। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত কাব্যালোচনায়। তিনি নতুন ধরণের কিছু লিখলে পাঠাতেন হোয়াটসঅ্যাপে, জানতে চাইতেন সুখের মতামত। বলতেন, “তোমার মতামত জানাটা খুব জরুরি।” যেমন প্রথম দিকে সুখও মতামত জানতে চাইত তার কাছে। সুখের এখনও মনে আছে কবিতা লিখতে লিখতে যখন প্রথম গল্প লেখে, গল্পের নাম রেখেছিল ‘একটি প্রেমের গল্প’। শম্ভুদাকে পাঠিয়েছিল, শম্ভুদা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ে জানিয়ে ছিলেন, “গল্প সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই, খুবই ভাল গল্প। শুধু নায়িকার নামটা মনে হচ্ছে ঠিক হয়নি। ওই নামের কোনো অর্থ হয় না, সম্ভবত তুমি সুহৃতা লিখতে গিয়ে লিখেছ সুরীতা, একবার অর্থটা দেখে নাও। চালিয়ে যাও সুখ, এই তো বেশ হচ্ছে। আমার অত ধৈর্য থাকে না, ওই টুকটাক যা হয়, তোমার গদ্যের হাত ভাল, তুমি কবিতার পাশাপাশি গদ্য লেখা ছেড়ো না।”
 
ক্রমশ

6 comments:

  1. দীপক বেরাDecember 13, 2025 at 4:35 PM

    আচ্ছা বেশ, চলুক। এবার সুখের পরবর্তী জীবনের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখা যাক পরিণতি ওকে কোন দিকে নিয়ে যায়....!

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথDecember 13, 2025 at 7:48 PM

      ধন্যবাদ দীপক-দা। আমিও আপনার তাকিয়ে রইলাম।

      Delete
    2. অজয় দেবনাথDecember 13, 2025 at 7:55 PM

      ধন্যবাদ দীপক-দা। আমিও আপনার মতো তাকিয়ে রইলাম।

      Delete
  2. সুখের মানসিক টানাপোড়েন এবং লেখক সুখের সাহিত্য জগতে বিচরণ ও শম্ভু দা-র প্রসঙ্গে ভাবনা পড়তে খুব ভালো লেগেছে ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথDecember 13, 2025 at 7:50 PM

      অনেক ধন্যবাদ অদিতি, এভাবেই সঙ্গে থাকুন।

      Delete
  3. ভাল জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে গল্প। এখন শুধু অপেক্ষা আসল রহস্য কোথায় গিয়ে মোড় নেবে। কলম চলুক। শুভকামনা রইল।

    ReplyDelete

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 7 days)