প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

তৈমুর খান সংখ্যা | মগজ ও অঙ্গ

বাতায়ন/ তৈমুর খান সংখ্যা/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/ ৩২তম সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ , ১৪৩২ তৈমুর খান সংখ্যা | সম্পাদকীয়   মগজ ও অঙ্গ "অপরিসীম মেধ...

Tuesday, November 25, 2025

সামান্তার অপেক্ষা [৭ম পর্ব] | মমিনুল পথিক

বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/৩৪তম সংখ্যা/২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
মমিনুল পথিক
 
সামান্তার অপেক্ষা
[৭ম পর্ব]

"তোমার জীবন এখন বর্ষাকালের মতোবাহারি রং ও সুবাসের লোভে মত্ত হয়ে কত ফুল অনুরাগী অলি তোমার পিছু নেবে। আমার ভয় হয় মা। তা হ্যাঁ রে মাসুদ সাহেব দেখতে কেমন?"

পূর্বানুবৃত্তি মাসুদের মুখ হতে কষ্ট ও সুখের পার্থক্যটা শুনে সামান্তা যেন কেমন হয়ে গেলেন। জীবনে কষ্টের সাথে কোনদিন পরিচয় হয়নি, তাইতো অনুভবেই আসেনি। কিন্তু এখন কেমন যেন কষ্টটা তিনি অনুভব করতে পারছেন। তারপর…

বাড়িতে পৌঁছে সামান্তার আর খুশির সীমা নেই। একে তো খাতাগুলো পেয়েছেন। অন্যদিকে মাসুদের মতো একজন ভাল মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া এ কি কম সৌভাগ্যের কথা? যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। মাকে জড়িয়ে ধরে সে-ই কী হাসি। মুখ যেন বন্ধ হতে চাইছে না, বলেই চলেছেন,
-জানো মা মাসদ সাহেব এত ভাল মানুষ আমি ভাবতেই পারিনি। মেসে নিয়ে গেলেন, নাস্তা খাওয়ালেন, তারপর খাতাগুলো দিলেন...।
সামান্তার কথা শেষ না হতেই সাহানা চৌধুরী মেয়ের সুরে সুর মিলিয়ে বললেন,
-তারপর?
মার মুখে কথাটি শুনে যেন লজ্জায় লাল হলেন সামান্তা।
-দূ-র কী যে বল না মা, তোমার মেয়ে কী সেরকম নাকি?
-পাগলি মেয়ে, আরে আমি তো ঠাট্টা করছিলাম। আমার মেয়েকে আমি তো চিনি, তবে শোন মা বর্ষার সময় রাস্তাঘাটে পা টিপে টিপে পথ চলতে হয়, নইলে যে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মেয়েকে সাবধান করে আরো বলেন।
-তোমার জীবন এখন বর্ষাকালের মতো, বাহারি রং ও সুবাসের লোভে মত্ত হয়ে কত ফুল অনুরাগী অলি তোমার পিছু নেবে। আমার ভয় হয় মা। তা হ্যাঁ রে মাসুদ সাহেব দেখতে কেমন?
-আর বল-না মা চমৎকার দেখতে একবারে ময়ূর ছাড়া কার্তিক।
-একদিন বাড়িতে নিয়ে আয় না, চা খেয়ে যাবে। তোর এত বড় একটি উপকার করল...।
-আচ্ছা একদিন সময় করে দাওয়াত করা যাবে মা।
 
মাসদ প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। পুরো নাম-মাসদ আল হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। বাবা হাসানুল হক গ্রামের স্কুল থেকে অবসর যাপন করছেন। তিন ভাই এক বোন। মাসুদের বড় ভাই সাজ্জাদ বিয়ে-শাদী করে আগেই পৃথক হয়েছেন। এক ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ছোট বোনটি কলেজে পড়ছে। ছোট ভাই-বোন দুটোকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সে। বাপের জমি বলতে বছরের খোরাকটুকু হয়। এর মধ্যে হতে কিছু জমি বিক্রি করতে হয়েছে সাজ্জাদকে বিদেশে পাঠানোর জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জমিটিই নষ্ট হল কিন্তু সাজ্জাদ কোন কাজে আসল না। দালালের খপ্পড়ে পড়ে ভুয়া ভিসায় গিয়ে কয়েকমাস জেল খেটে ফেরত এসেছে। এ নিয়ে বাপ-ছেলের মধ্যে অনেক মনোমালিন্য হয়েছে। এখন সংসারের সব ঘানি টানতে হয় মাসদকে।
 
বেচারি কতই আর পরিশ্রম করবে? চাকুরি করে টিউশনি করা, শরীরের উপর অনেক ধকল যাচ্ছে তার। প্রতিমাসে মায়ের ঔষধ লাগে অনেক টাকার। ইদানীং মায়ের শরীরটি ভাল যাচ্ছে না। গতরাতে টিউশনি করে মেসে এসে পত্রিকা হাতে নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময় মোবাইলে মায়ের অসুস্থতার খবর পান। এতরাতে পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় যেতে পারেননি।
 
পরদিন খুব ভোরে ওঠে ফজরের নামাজ পড়ে বাসি মুখেই রওনা হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন মাসদ। ততক্ষণে ধলার মা এসেছেন। যাওয়ার আগে ধলার মাকে বললেন যে, তার সাথে যদি কেউ দেখা করতে আসেন তাহলে যেন তিনি বলে যে সে গ্রামের বাড়িতে গেছে। ধলার মা মরা চাল বাছতে বাছতে বললেন, হ- কমুনে। স্যারের বাসায় গিয়ে ছুটি নিয়ে বাড়িতে রওনা হন মাসদ।
 
খাতা জমা দিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে মায়ের কথা মনে পড়ল সামান্তার। মাসদের মেসের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভাবলেন, একটু দেখা করে আমন্ত্রণ করে যাব। রিকশা দাঁড় করিয়ে রেখে মেসে ঢুকলেন তিনি।
ধলার মা তরকারি কাটতে বসেছেন। সামান্তাকে দেখে চমকে উঠে এগিয়ে গিয়ে,
-আফা আমনি, মাসুদ বাবাজি তো নাইক্যা। বাড়ি গ্যাছে, তার মায়ের নাকি অসুখ করেছে। আমনি বহেন, আমি ছা আনি...।
বলেই চলেছেন ধলার মা।
-না থাক, আমি বরং যাই।
-কোন কামে আইছেন?
-না এমনি আসছিলাম, এদিক দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তাই ভাবলাম...।
-আফা মাসুদ বাবাজিকে কিচু কইতে অইবো?
-বলবেন আমি আসছিলাম।
বলে চলে যায় সামান্তা।
-আচ্ছা কমু নে।
সামান্তার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকেন ধলার মা।
 
তিন দিন ছুটি শেষে আজকেই বাড়ি থেকে সোজা অফিসে এসেছেন মাসদ। অফিস শেষে মেসে ফিরে শুয়ে শুয়ে স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়ছেন তিনি। বাবা- মা, ভাই-বোন...। ধলার মা বারান্দা থেকে ‘মাসুদ বাবাজি’ বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলেন। মাসুদ সোজা হয়ে ওঠে বললেন,
-খালা কিছু কইবা কও।
-হ কমু, গত পরশু ওই আফা-ই আইছিলো।
-কোনা আপা?
-আরে হেই আফা, মাস্টারনি আফা।
-মাস্টারনি আপা মানে সামান্তা?
আশ্চর্য হয় মাসউদ।
-তাইলে আর কী কইলাম বাবাজি।
এবার রীতিমতো নড়েচড়ে বসলেন মাসউদ।
-বল তো খালা, সব খুলে বল তো।
-আমি পারব না বাপু তুমি মোবাইল করে খবর নেও। তবে হে নাকি স্কুলথন ফিরার পথে এদিক দিয়া যাচ্ছিল তাই। বড়লোকের মতিগতির কি ঠিক আছে?
বিড় বিড় করে ধলার মা।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 10 (Last 7 days)