প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ওয়েটিং লিস্টে আছি... | রতনলাল আচার্য্য

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা রতনলাল আচার্য্য ওয়েটিং লিস্টে আছি ....

Saturday, August 5, 2023

ওগো তুমি পঞ্চদশী | সীমা ব্যানার্জী-রায়

 

বাতায়ন/ধারাবাহিক/সাপ্তাহিকী/১ম বর্ষ/১৪তম সংখ্যা/১২ই শ্রাবণ, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
সীমা ব্যানার্জী-রায়
[২য় পর্ব]

ওগো তুমি পঞ্চদশী

পূর্বানুবৃত্তি তেরো-চোদ্দো বছরের মেয়ে পলি আমেরিকায় এসে কিছুতেই নিজেকে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে মেলাতে পারছে না। তাদের কালচার, তাদের আচরণ, এমনকি তাদের… তারপর…

বাবার সঙ্গে মেয়েদের সম্পর্ক নিয়েও এরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে নির্বিবাদে। অদ্ভুত লাগে পলির। ওর মনে হয় ছুটে চলে যাবে দেশে মা-বাবাকে ছেড়ে। মা-বাবাও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আজকাল। কত হাসিঠাট্টা করত বাবা আর মা মিলে। আর এখানে? না থাক... আর বলে কাজ নেই। এমন কেউ নেই, যাকে সব কথা খুলে বলা যায়?

মা দু’বার এসে দেখে গেছে পলি টেবিল ছেড়ে স্থির হয়ে শুয়ে রয়েছে তার বিছানায়। একটা হাত মাথার নীচে আর একটা হাত বুকে। মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে, ঠোঁট দুটো চেপে রেখেছে একটার ওপর আর একটা। শুয়ে শুয়ে ভাবছিল সেই অদ্ভুত লজ্জাহীনা মেয়েদের ব্যবহার... সে-ও তো দেশে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে কিন্তু এ যেন... না না আর ভাবতে পারছে না সে। মাথাটা কেমন যেন টনটন করছে... চোখটা ভারী হয়ে যাচ্ছে। ফিশফিশ করে বলতে চায় তার গোপন কথা। যে কথার ভাব আছেভাষা নেই। স্থূল বাস্তব সূক্ষ্ম পরাবাস্তব।

কথায় বলে- ”শতং বদ মা লিখ” তখন সে একা আর এক বগ্গা। কত কিছু মনে পড়ছে এই মুহূর্তে।


— কী রে এখনও শুয়ে থাকবি নাকিস্কুল থেকে এসে অবধি একবার টেবিলে আবার এখন দেখি বিছানায়কেনকী হয়েছে বলবি?
— শুনে কী করবেবলা যাবে না... মা। মানে বলতে আমার গা-মন সব ঘিনঘিন করছে। শুধু একটাই প্রশ্ন-তোমরা কেন নিজেদের সুখের জন্য আমাকে এত বড় একটা শাস্তি দিলে? না পারছি এদের সাথে মিশতে, না পারছি এদের আদবকায়দা মেনে নিতে!

তাকে মা-এর সামনে খুলতেই হল দুঃখের উপচে পড়া ডালি।

দু’হাতে তালুর ওপর চিবুক রেখে চুপচাপ শুনলেন মা। চশমাটা ঠিক করে নিলেন। গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইলেন পুরো একটা মিনিট ২৬ সেকেন্ড। তারপর ৪ সেকেন্ডে নিজের মনকে আয়ত্ত্বে এনে বলে উঠলেন...

— আমরা কী আর নিজেদের সুখের জন্য এসেছি না তোকে বেটার লাইফ দেবো তার জন্য এসেছিদেশে কত কম্পিটিশন দেখেছিস তো? কত স্কোপ আছে এই দেশেবুঝবি যখন, তখন আর আমাদের দোষ দেখবি না।
তোমাকে তোমার মতন বাঁচতে শিখতে হবে। নিজের মর‍্যালিটি বাঁচিয়ে এদের সাথে মিশতে হবে। তোমার মতন কত মেয়ে আছে এ দেশে যারা প্রথম এসে গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসেছিল। তারপর নদীর পাড়ের খুঁটি শক্ত করে ধরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা সম্পূর্ণ একটা অন্য দেশঅন্য কালচারসেখানে তোমার পছন্দ মতো সব পেতে গেলে নিজেকে আগে তৈরি করো।

ফোঁস করে উঠল মেয়ে,

— নিজেকে তৈরি? কী বলতে চাইছ? তোমরা বুঝবে না আমাদের মতন দেশে জন্মানো মেয়েদের ব্যথা, যারা এই টিনএজে এসে এক ভীষণ সমস্যার মুখোমুখি হয়। তারা এখানকার কালচার জানবে, না -নিজেদের উঁচু ক্লাসের পড়াশুনায় মন দেবেতোমরা বুঝবে না- কী দারুণ মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে আমার দিন কাটছে। কাউকে বুঝিয়ে উঠবার মতন মানসিকতা হারিয়ে ফেলছি দিনের পর দিন। তোমরা আছ তোমাদের জগতে আর আমি? দুঃখ আর কান্নার নদীতে ভেসে যাই রোজ... জানো তা?

এই রূপকথার দেশে মেয়ের চোখের অশ্রুবিন্দু যেন জমাট বাঁধা কোন পাথর। কিছুতেই সেই পাথরকে উন্মোচন করা যাচ্ছে না। জীবনের আলো ও অন্ধকার দুই জগতকে সঠিকভাবে চিনতে হলে কি সেই জগতে জীবনযাপন জরুরিমা-বাবাই বা এখন ফিরবে কী ভাবে? তাই মেয়েকে জড়িয়ে মা গেয়ে উঠলেনঃ


চারিদিকে চেয়ে দেখো হৃদয় প্রসারী
ক্ষুদ্র দুখ তব তুচ্ছ মানি...”।

 

সমাপ্ত

 

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)