বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য়
বর্ষ/৭ম সংখ্যা/২৮শে আষাঢ়, ১৪৩১
ধারাবাহিক গল্প
রাখি সরদার
চক্ষুদান
[২য় পর্ব]
"মিলনই নিখিলেশদাকে উস্কে ছিল উলুবেড়ে থেকে মাটি আনতে। নৌকায় ফেরার পথে নিখিলেশদার বুক যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর নৌকাতেই ছটপট করতে করতে নাকি মারা যায়।"
পূর্বানুবৃত্তি রাত পোহালে মহালয়া। কমলেশ ঠাকুরের চক্ষুদানের দায়িত্বে আছে।
এখনকার মালিক মিলন হালদার এরই মধ্যে শাসিয়ে গেছে, সময়মতো কাজ নাহলে রক্ষে নেই।
কমলেশের ডান হাত নেই, শুধু বাঁ হাতেই কাজ করে। বাবা নিখিলেশ পাল তাকে সেভাবেই কাজ
শিখিয়েছে। কিন্তু এ বছর সে কিছুতেই মনোযোগ করতে পারছে না। তারপর…
মিলন অত্যন্ত ক্রুদ্ধস্বরে বলে ওঠে,
“সুরথ, চুপ কর। সব যে যার কাজে যা তো।’’
কর্মচারীরা নিজেদের কাজে লেগে যায়। একজন বয়স্ক মানুষের তাকিয়ে বলে ওঠে মিলন,
“দীনুকাকা দাঁড়াও।’’
“সুরথ, চুপ কর। সব যে যার কাজে যা তো।’’
কর্মচারীরা নিজেদের কাজে লেগে যায়। একজন বয়স্ক মানুষের তাকিয়ে বলে ওঠে মিলন,
“দীনুকাকা দাঁড়াও।’’
খাটো ধুতি পরা একজন মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে উৎসুক মুখে,
“কাকা, এদের নিয়ে এই চালার সব প্রতিমাগুলো যতসম্ভব তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করে ফেলো। কিছু পার্টি তাদের
প্রতিমা দ্বিতীয়ার দিন নিয়ে চলে যাবে।’’
কথাগুলো বলেই দ্রুত বের হয়ে যায়। মিলনকে একেক সময় বুঝতে পারে না দীনু পাল। সবসময় কমলের উপর খেপে আছে বলে মনে হয়। কিন্তু ছেলেটা কমলেশকে ভাইয়ের মতো ভালবাসে। অন্য কেউ হলে এতদিন কমলেশকে কাজ থেকে তাড়িয়ে দিত। তবে কী লোকে যা বলে তা সত্যি! সেদিন তো এই মিলনের সঙ্গেই
নিখিলেশদা উলুবেড়ে গিয়েছিল। মিলন তখন কুমোরটুলিতে মাটি সাপ্লাইয়ের কাজ করত। মিলনই নিখিলেশদাকে উস্কে ছিল উলুবেড়ে থেকে মাটি আনতে। নৌকায় ফেরার পথে নিখিলেশদার বুক যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর নৌকাতেই ছটপট করতে করতে নাকি মারা যায়। লোকে বলে নিখিলেশদার এই ‘জগতমাতা শিল্পালয়’টা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য মিলনই কারসাজি করে নিখিলেশদাকে মেরে দিয়েছে। কমলেশের ক্ষমতা ছিল না এই শিল্পালয় টিকিয়ে রাখার। সেই কারণেই কি মিলন অনুতপ্ত! কমলেশকে হাজার বকলেও এখান থেকে তাড়িয়ে দেয় না। এখানেই ও কাজ করুক, এটা দীনু নিজেও চায়। সেও যে কমলেশের প্রতি অন্যায় করেছে। বাবার ব্যবসা চলে যাওয়াতে বুড়িকে কমলেশের হাতে তুলে দিতে পারেনি। বুড়ি তার একমাত্র মেয়ে। সে বাবা হয়ে কীভাবে প্রতিবন্ধী কমলেশের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবে! যদিও ওরা দু’জন দু’জনকে ছোট থেকেই ভালবাসত। এই ব্যবসাটা থাকলে এক কথা ছিল। নিখিলেশদা তাকে নদীয়ার গ্রাম থেকে এনে এখানে কাজ দিয়েছিল। তখন কত আনন্দ। দুই বন্ধুর কত গল্প। দু’জনের ছেলেমেয়ের বিয়ে হবে। সবই তার কপাল। নিখিলেশদা মারা গেলে এই আগের বৈশাখেই বুড়ির ভাল ঘরে বিয়ে দেয়। কেউ না বুঝলেও, সে বোঝে কমলেশের কষ্ট। ছেলেটা সেই থেকে একা হয়ে গিয়েছে। দীনু কমলেশের কাছে গিয়ে স্নেহের সুরে বলে,
“কমল এখনও বসে আছিস! তাড়াতাড়ি কাজ কর বাবা।”
হীরু সোৎসাহে বলে ওঠে,
“কমলদা শুরু করো। বিকেলে গঙ্গার ধারে যাবো। তখন তোমাকে বিড়ি নয়, আস্ত সিগারেট খাওয়াব।’’
হীরু জানে গঙ্গার ধারে ভাঙা মন্দিরের ঘাট কমলেশের প্রিয় জায়গা। কতবার সেখানে রাত অবধি বসে বসে গল্প
হয়েছে। বুড়িদিও তাদের সঙ্গে দু’তিনবার গিয়েছে। নিখিলেশ কাকা মারা যাওয়ায় ব্যবসাটাও গেল, তার উপর একটা হাত না থাকায় দীনুকাকা বুড়িদির সঙ্গে বিয়েও দিল না।
“হীরু পারছি না আঁকতে!’’
হীরু কী বলবে ভেবে পায় না। মানুষটার কষ্ট সে উপলব্ধি করতে পারছে। কিন্তু মিলনদা কি বুঝবে? হীরুর ভাবনার মাঝে দীনু পাল বলে ওঠে,
“কমল আজ তুই বাড়ি যা। আমি আর হীরু দেখছি কাজটা। কিন্তু কাল মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষেই মাতৃপক্ষ
শুরু। তুই ভোর ভোর স্নান সেরে চলে আসবি। কাল মায়ের চক্ষুদান। তোর হাতেই মায়ের চক্ষুদান হয় প্রতিবছর। বাড়ি যা এখন।’’
“কিন্তু মিলনদা যে রেগে যাবে।’’
“সে আমি বুঝব। হীরু তুলি আন।’’
কমলেশ বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। আশালতা অসময়ে ছেলেকে ফিরতে দেখে ভয় পায়। তবে কী মিলন সত্যিই এবার তার ছেলেকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিল!
“খোকা, মিলন কিছু বলেছে?”
“না মা, আমার শরীরটা একটু খারাপ। বলল কাল যেতে।’’
আশালতা ছেলের কথায় আশ্বস্ত হয়। সে জানে প্রতিবছর মহালয়ার দিন তার ছেলেই মায়ের চক্ষুদান করে।
কমলেশ বিছানায় চুপ করে শুয়ে থাকে। স্নান, খাওয়াদাওয়া কিছুই করেনি। আশালতা অনেকবার দুপুরে খেতে ডেকেছে। সে ওঠেনি। দুপুর ঢলে অভিমানের মতো বিকেল নামছে। নিজের মধ্যে ছটফট করছে। কেন সে আজ রং, তুলি ধরতে পারল না। শুধু গণেশ নয়, কার্তিক বাহন ময়ূরের চোখও আঁকতে গিয়েছিল। ময়ূরটি যেন তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে তার আঙুলে আঁচড়ে দিয়েছে! নিজের বাম হাতের আঙুলগুলো ভাল করে দেখতে থাকে। ‘এই তো হাল্কা আঁচড়ের দাগ!’ এমন সময় বাইরে থেকে মা আশালতার গলার আওয়াজ শোনা যায়,
“খোকা, এখনও উঠবিনি? শরীর খারাপ? একটু কিছু খা বাবা। তুই না খেলে আমি কীভাবে খাই বল দিকি।’’
কমলেশ মায়ের কথায় চমকে ওঠে। সে যে ভুলেই গিয়েছে। মা তাকে ছাড়া কোনোদিন একা খায় না। তাড়াতাড়ি উঠে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে। আশালতা ভাতের থালা সাজিয়ে খেতে দেয়। খাবারের আয়োজন দেখে কমল বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
“এত বড় মাছের পিস, ফুলকপি, দই, মিষ্টি কোথায় পেলে? মিলনদা কি আগাম কিছু টাকা দিয়েছে!”
“আরে না, বুড়ি এসেছিল। এইসব খাবারদাবার সে এনেছে। তোর কথা খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করছিল।’’
“সে দিয়ে গেল আর তুমি নিয়ে নিলে! আমাদের দয়া করছে?’’
“মেয়েটার কী দোষ বল খোকা। মেয়েটা যে সুখী হয়নি সেটা তার মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি।’’
কমলেশ চুপ করে যায়। গলা দিয়ে ভাত নামে না। কোনোরকমে দুটো খেয়ে উঠে যায়। শরীরটাও যেন ক্লান্ত।
আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। জানালার পাশের পেয়ারা গাছের ডাল বেয়ে বিকেলের হলুদ রোদ বিছানায় ছড়িয়ে। ছোটবেলায় সে আর বুড়ি এই পেয়ারা গাছের তলায় কত খেলা করেছে। বুড়িই যে তার প্রেরণা। তার
রং ছিল। আগের বৈশাখে সেই বুড়ির বিয়ে হয়ে গেল। তার জীবনের আলো নিভে গেল। পুজো এসে গেল।
অথচ সে এখনও শিউলির গন্ধ অনুভব করতে পারছে না। না, আর কারও কথা ভাববে না। আজ রাত পোহালেই মহালয়া। তাকে মায়ের চক্ষুদান করতে হবে। সন্ধে নামার আর বেশি বাকি নেই। কমলেশ শুয়েই থাকে। এমন সময় হীরুর গলা,
“কমল দা, ও কমল দা… কোথায় গো?’’
কমলেশ বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হীরু বলে ওঠে,
“চলো গঙ্গার ধারে যাই। মা গঙ্গাকে প্রণাম করে আসি।’’
“কাকা, এদের নিয়ে এই চালার সব প্রতিমাগুলো যতসম্ভব তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করে ফেলো। কিছু পার্টি তাদের
প্রতিমা দ্বিতীয়ার দিন নিয়ে চলে যাবে।’’
কথাগুলো বলেই দ্রুত বের হয়ে যায়। মিলনকে একেক সময় বুঝতে পারে না দীনু পাল। সবসময় কমলের উপর খেপে আছে বলে মনে হয়। কিন্তু ছেলেটা কমলেশকে ভাইয়ের মতো ভালবাসে। অন্য কেউ হলে এতদিন কমলেশকে কাজ থেকে তাড়িয়ে দিত। তবে কী লোকে যা বলে তা সত্যি! সেদিন তো এই মিলনের সঙ্গেই
নিখিলেশদা উলুবেড়ে গিয়েছিল। মিলন তখন কুমোরটুলিতে মাটি সাপ্লাইয়ের কাজ করত। মিলনই নিখিলেশদাকে উস্কে ছিল উলুবেড়ে থেকে মাটি আনতে। নৌকায় ফেরার পথে নিখিলেশদার বুক যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর নৌকাতেই ছটপট করতে করতে নাকি মারা যায়। লোকে বলে নিখিলেশদার এই ‘জগতমাতা শিল্পালয়’টা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য মিলনই কারসাজি করে নিখিলেশদাকে মেরে দিয়েছে। কমলেশের ক্ষমতা ছিল না এই শিল্পালয় টিকিয়ে রাখার। সেই কারণেই কি মিলন অনুতপ্ত! কমলেশকে হাজার বকলেও এখান থেকে তাড়িয়ে দেয় না। এখানেই ও কাজ করুক, এটা দীনু নিজেও চায়। সেও যে কমলেশের প্রতি অন্যায় করেছে। বাবার ব্যবসা চলে যাওয়াতে বুড়িকে কমলেশের হাতে তুলে দিতে পারেনি। বুড়ি তার একমাত্র মেয়ে। সে বাবা হয়ে কীভাবে প্রতিবন্ধী কমলেশের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবে! যদিও ওরা দু’জন দু’জনকে ছোট থেকেই ভালবাসত। এই ব্যবসাটা থাকলে এক কথা ছিল। নিখিলেশদা তাকে নদীয়ার গ্রাম থেকে এনে এখানে কাজ দিয়েছিল। তখন কত আনন্দ। দুই বন্ধুর কত গল্প। দু’জনের ছেলেমেয়ের বিয়ে হবে। সবই তার কপাল। নিখিলেশদা মারা গেলে এই আগের বৈশাখেই বুড়ির ভাল ঘরে বিয়ে দেয়। কেউ না বুঝলেও, সে বোঝে কমলেশের কষ্ট। ছেলেটা সেই থেকে একা হয়ে গিয়েছে। দীনু কমলেশের কাছে গিয়ে স্নেহের সুরে বলে,
“কমল এখনও বসে আছিস! তাড়াতাড়ি কাজ কর বাবা।”
হীরু সোৎসাহে বলে ওঠে,
“কমলদা শুরু করো। বিকেলে গঙ্গার ধারে যাবো। তখন তোমাকে বিড়ি নয়, আস্ত সিগারেট খাওয়াব।’’
হীরু জানে গঙ্গার ধারে ভাঙা মন্দিরের ঘাট কমলেশের প্রিয় জায়গা। কতবার সেখানে রাত অবধি বসে বসে গল্প
হয়েছে। বুড়িদিও তাদের সঙ্গে দু’তিনবার গিয়েছে। নিখিলেশ কাকা মারা যাওয়ায় ব্যবসাটাও গেল, তার উপর একটা হাত না থাকায় দীনুকাকা বুড়িদির সঙ্গে বিয়েও দিল না।
“হীরু পারছি না আঁকতে!’’
হীরু কী বলবে ভেবে পায় না। মানুষটার কষ্ট সে উপলব্ধি করতে পারছে। কিন্তু মিলনদা কি বুঝবে? হীরুর ভাবনার মাঝে দীনু পাল বলে ওঠে,
“কমল আজ তুই বাড়ি যা। আমি আর হীরু দেখছি কাজটা। কিন্তু কাল মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষেই মাতৃপক্ষ
শুরু। তুই ভোর ভোর স্নান সেরে চলে আসবি। কাল মায়ের চক্ষুদান। তোর হাতেই মায়ের চক্ষুদান হয় প্রতিবছর। বাড়ি যা এখন।’’
“কিন্তু মিলনদা যে রেগে যাবে।’’
“সে আমি বুঝব। হীরু তুলি আন।’’
কমলেশ বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। আশালতা অসময়ে ছেলেকে ফিরতে দেখে ভয় পায়। তবে কী মিলন সত্যিই এবার তার ছেলেকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিল!
“খোকা, মিলন কিছু বলেছে?”
“না মা, আমার শরীরটা একটু খারাপ। বলল কাল যেতে।’’
আশালতা ছেলের কথায় আশ্বস্ত হয়। সে জানে প্রতিবছর মহালয়ার দিন তার ছেলেই মায়ের চক্ষুদান করে।
কমলেশ বিছানায় চুপ করে শুয়ে থাকে। স্নান, খাওয়াদাওয়া কিছুই করেনি। আশালতা অনেকবার দুপুরে খেতে ডেকেছে। সে ওঠেনি। দুপুর ঢলে অভিমানের মতো বিকেল নামছে। নিজের মধ্যে ছটফট করছে। কেন সে আজ রং, তুলি ধরতে পারল না। শুধু গণেশ নয়, কার্তিক বাহন ময়ূরের চোখও আঁকতে গিয়েছিল। ময়ূরটি যেন তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে তার আঙুলে আঁচড়ে দিয়েছে! নিজের বাম হাতের আঙুলগুলো ভাল করে দেখতে থাকে। ‘এই তো হাল্কা আঁচড়ের দাগ!’ এমন সময় বাইরে থেকে মা আশালতার গলার আওয়াজ শোনা যায়,
“খোকা, এখনও উঠবিনি? শরীর খারাপ? একটু কিছু খা বাবা। তুই না খেলে আমি কীভাবে খাই বল দিকি।’’
কমলেশ মায়ের কথায় চমকে ওঠে। সে যে ভুলেই গিয়েছে। মা তাকে ছাড়া কোনোদিন একা খায় না। তাড়াতাড়ি উঠে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে। আশালতা ভাতের থালা সাজিয়ে খেতে দেয়। খাবারের আয়োজন দেখে কমল বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
“এত বড় মাছের পিস, ফুলকপি, দই, মিষ্টি কোথায় পেলে? মিলনদা কি আগাম কিছু টাকা দিয়েছে!”
“আরে না, বুড়ি এসেছিল। এইসব খাবারদাবার সে এনেছে। তোর কথা খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করছিল।’’
“সে দিয়ে গেল আর তুমি নিয়ে নিলে! আমাদের দয়া করছে?’’
“মেয়েটার কী দোষ বল খোকা। মেয়েটা যে সুখী হয়নি সেটা তার মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি।’’
কমলেশ চুপ করে যায়। গলা দিয়ে ভাত নামে না। কোনোরকমে দুটো খেয়ে উঠে যায়। শরীরটাও যেন ক্লান্ত।
আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। জানালার পাশের পেয়ারা গাছের ডাল বেয়ে বিকেলের হলুদ রোদ বিছানায় ছড়িয়ে। ছোটবেলায় সে আর বুড়ি এই পেয়ারা গাছের তলায় কত খেলা করেছে। বুড়িই যে তার প্রেরণা। তার
রং ছিল। আগের বৈশাখে সেই বুড়ির বিয়ে হয়ে গেল। তার জীবনের আলো নিভে গেল। পুজো এসে গেল।
অথচ সে এখনও শিউলির গন্ধ অনুভব করতে পারছে না। না, আর কারও কথা ভাববে না। আজ রাত পোহালেই মহালয়া। তাকে মায়ের চক্ষুদান করতে হবে। সন্ধে নামার আর বেশি বাকি নেই। কমলেশ শুয়েই থাকে। এমন সময় হীরুর গলা,
“কমল দা, ও কমল দা… কোথায় গো?’’
কমলেশ বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হীরু বলে ওঠে,
“চলো গঙ্গার ধারে যাই। মা গঙ্গাকে প্রণাম করে আসি।’’
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment