বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী
সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | ছোটগল্প
তপন মাইতি
সাদাছবি
"নিয়তির কী পরিহাস! অন্যের হওয়া সত্ত্বেও তোমাকে খুব মনে পড়ছে আজ। স্মৃতিগুলো ঘুনপোকার মতো মাথায় কামড়াচ্ছে। কাঁটা দিয়ে উঠছে সারা শরীর… ঘুম আসছে না কিছুতেই..."
কথাটা শুনে মাথাটা ঘুরে গেল। চোখ উঠল কপালে। কোনরকম নিজেকে সামলে ফোনে
নিজেকে ব্যস্ত রেখে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এল খুব যত্নে। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে
জল দিল।
নবম শ্রেণির বাংলা ক্লাসে রবীন্দ্রনাথের ‘খেয়া’ কবিতাটা এখানেই স্থগিত
হল। কী ব্যাপার! ক্লাসের মাথায় বিশাল একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন! জীবনের খেয়া কোথায়
গিয়ে ভিড়বে তার ঠিক ঠিকানা নেই। স্টাফরুমে গিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল
সোমাপ্রসাদ। তার মা ফোনে বলল যে তার স্ত্রী রিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেছে
একটু দ্যাখ তো সুমু…! সোমাপ্রসাদ একটু আকাশপাতাল খতিয়ে দেখে নিল। ঠিক কোথায়
কোথায় তার যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাড়ি থেকে আসা পর্যন্ত তো তার চলে যাওয়ার মতো
কিছুই ঘটনা ঘটেনি। প্রথমে ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিল। কোথায় যাবে? সন্ধ্যা নামার
আগে বাড়ি ফিরে আসবে। সে একে একে খোঁজ নিতে শুরু করল। প্রিয় জিনিস হারিয়ে গেলে
যেমন পাগলের মতো খোঁজে। সোমাপ্রসাদও সম্ভাবনাময় সবজায়গাতেই খোঁজ নিল।
শ্বশুরবাড়ি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, কোথাও পাওয়া গেল না। স্বাভাবিকতা যেন
ক্রমশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। মাথায় যেন খটকা লাগল একটা। কোথায় যেতে পারে ও…
হন্তদন্ত অস্থির টালমাটাল আবেগি বিধ্বস্ত ক্লান্ত অবস্থায় সোমাপ্রসাদ ঘরে ঢুকল। না খাওয়া, না দাওয়া, না স্নান করা। যেন কোন মানুষের ওপর দিয়ে আমফানের মতো প্রবল আগ্রাসী ঝড়। করোনার প্যানডেমিক সিচুয়েশন। আর ইয়াশে ভরা কোটালের জলোচ্ছ্বাস আর আয়লার মতো বিধ্বংসী স্মৃতি। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার মতো মনের অবস্থা। একসাথে মাথার ওপর দিয়ে যেন বয়ে গেছে। মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। যেন মনে হচ্ছে ঊনপঞ্চাশের বন্যা আর ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। পুরুষমানুষ শামুকের মতো। যেমন ধরুন পাথর ভেঙে গেলে জোড়া লাগানো যায় না কিন্তু সহজে আবাব সে ভাঙেও না। হ্যাঁ যদি সারাদিনের শেষে রিয়াকে পাওয়া যেত তাহলে তো কথাই নেই। সারাদিন যা ছোটাছুটি জার্নি গেছে। কোন মানুষের শারীরিক মানসিক অবস্থা ভাল থাকে? সোমাপ্রসাদ খুব শান্তভাবে ঘেমো কালো মুখটা রুমালে মুছতে মুছতে একটা চেয়ার নিয়ে নিজেকে একটু এলিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে মগ্ন! কী যেন ভাবছে সে। আর চেয়ারটা ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ করছে। নেশাভাঙের একটুও ধার ধারে না সোমাপ্রসাদ।
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, মেস হোস্টেলে কত র্যাগিং হয়েছে। তবুও তার বাবার কাছে দেওয়া কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে এখনও 'যতদিন না তুই নিজের পায়ে দাঁড়াবি ততদিন কোন নেশা ভাঙে হাত দিবি না… কথা দে! এই কথা রাখার জন্য বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন কত কী বলেছে করেছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। এখন যে যুগ এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে নয়তো তুমি ব্যাকডেটেড। গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি না মানতে পারলে কেউ তোমাকে পুঁছবে না। ইউজ অ্যান্ড থ্রু তো একইরকম। এমনকি অনেকেই প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত করেছে, কটাক্ষ করেছে ‘কোন নেশা ভাঙে হাত দেয় না সে আবার পুরুষ নাকি...’ এইসব হিজিবিজি মাথার মধ্যে ঘুরছে ভাবছে, হঠাৎ এমন সময় দুম করে প্রাণবন্ধু প্রহ্লাদের ফোন। সে বলল— হ্যালো! রিয়া পালিয়েছে রে! শুনে মাটিতে পড়ে গেল সোমাপ্রসাদ। নাকে মুখে রক্ত উঠে এল। সকলে মিলে জামতলার হসপিটালে ভর্তি করল ওষুধের প্রেসক্রিপশনে লিখে ফেলল তার হৃদয়ের কথা সোমাপ্রসাদ…
হন্তদন্ত অস্থির টালমাটাল আবেগি বিধ্বস্ত ক্লান্ত অবস্থায় সোমাপ্রসাদ ঘরে ঢুকল। না খাওয়া, না দাওয়া, না স্নান করা। যেন কোন মানুষের ওপর দিয়ে আমফানের মতো প্রবল আগ্রাসী ঝড়। করোনার প্যানডেমিক সিচুয়েশন। আর ইয়াশে ভরা কোটালের জলোচ্ছ্বাস আর আয়লার মতো বিধ্বংসী স্মৃতি। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার মতো মনের অবস্থা। একসাথে মাথার ওপর দিয়ে যেন বয়ে গেছে। মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। যেন মনে হচ্ছে ঊনপঞ্চাশের বন্যা আর ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। পুরুষমানুষ শামুকের মতো। যেমন ধরুন পাথর ভেঙে গেলে জোড়া লাগানো যায় না কিন্তু সহজে আবাব সে ভাঙেও না। হ্যাঁ যদি সারাদিনের শেষে রিয়াকে পাওয়া যেত তাহলে তো কথাই নেই। সারাদিন যা ছোটাছুটি জার্নি গেছে। কোন মানুষের শারীরিক মানসিক অবস্থা ভাল থাকে? সোমাপ্রসাদ খুব শান্তভাবে ঘেমো কালো মুখটা রুমালে মুছতে মুছতে একটা চেয়ার নিয়ে নিজেকে একটু এলিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে মগ্ন! কী যেন ভাবছে সে। আর চেয়ারটা ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ করছে। নেশাভাঙের একটুও ধার ধারে না সোমাপ্রসাদ।
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, মেস হোস্টেলে কত র্যাগিং হয়েছে। তবুও তার বাবার কাছে দেওয়া কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে এখনও 'যতদিন না তুই নিজের পায়ে দাঁড়াবি ততদিন কোন নেশা ভাঙে হাত দিবি না… কথা দে! এই কথা রাখার জন্য বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন কত কী বলেছে করেছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। এখন যে যুগ এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে নয়তো তুমি ব্যাকডেটেড। গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি না মানতে পারলে কেউ তোমাকে পুঁছবে না। ইউজ অ্যান্ড থ্রু তো একইরকম। এমনকি অনেকেই প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত করেছে, কটাক্ষ করেছে ‘কোন নেশা ভাঙে হাত দেয় না সে আবার পুরুষ নাকি...’ এইসব হিজিবিজি মাথার মধ্যে ঘুরছে ভাবছে, হঠাৎ এমন সময় দুম করে প্রাণবন্ধু প্রহ্লাদের ফোন। সে বলল— হ্যালো! রিয়া পালিয়েছে রে! শুনে মাটিতে পড়ে গেল সোমাপ্রসাদ। নাকে মুখে রক্ত উঠে এল। সকলে মিলে জামতলার হসপিটালে ভর্তি করল ওষুধের প্রেসক্রিপশনে লিখে ফেলল তার হৃদয়ের কথা সোমাপ্রসাদ…
আমি সেই চরম অবজ্ঞার পাত্র
যাকে ফিরিয়ে দিলে
হাসির ছলে ফুল মাড়িয়ে দিলে...
যাকে ফিরিয়ে দিলে
হাসির ছলে ফুল মাড়িয়ে দিলে...
নিয়তির কী পরিহাস! অন্যের হওয়া সত্ত্বেও তোমাকে খুব মনে পড়ছে আজ। স্মৃতিগুলো ঘুনপোকার মতো মাথায় কামড়াচ্ছে। কাঁটা দিয়ে উঠছে সারা শরীর… ঘুম আসছে না কিছুতেই...
ভোরে ডাক্তারবাবু খবর দেন হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। সোমাপ্রসাদের সাদাছবি ভেসে উঠছে প্রেসক্রিপশনে...
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment