প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Friday, December 13, 2024

দুলালের মা [১ম পর্ব] | ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য

বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

মোহন রায়হান সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প

ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য

দুলালের মা

[১ম পর্ব]

"আজ মাসখানেক হলো আদুরির স্বামী নিখোঁজ হয়েছে। গ্রামে সেই নিয়ে ভালমন্দ নানা কথা শিমুল তুলোর মতো উড়ে বেড়ায়। কেউ বলে জামালপুরের কাছে কোনো এক মহিলার রূপে মজেছে। কেউ বলে অন্য একটা সংসার আছে। আসলে মাথার ব্যামো, এমন কথাও শোনা যায় কারোর মুখে। আদুরি বলে অন্য কথা।"


দুপুরবেলায় উঠানে বসে রান্না করছিল আদুরি। দুলালের মা আসে সেই সময়। 
-কী করিস বউ
সারাদিনে মাঝেমধ্যেই দুলালের মা আসে, বিপদের দিনে খোঁজ খবর নেয় আদুরির। গ্রামের আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে দুলালের মা আলাদা, আদুরির খুব পছন্দ হয়।
-দুটো চাল ফুটিয়ে নিই। আমি না খেলেও চলে কাকিমা, রোগীর মুখে খাবার না দিলে কি চলে!
-সে তো ঠিক কথাই বউ।
আদুরির শাশুড়ি বিছানা নিয়েছে আজ বেশ কদিন হলো। কোমর থেকে দু-পা অবশ হয়ে আছে। উত্থান শক্তি নেই। 
দুলালের মায়ের গলা পেয়ে ঘর থেকে আদুরির শাশুড়ি জিজ্ঞাসা করে,
-আমার ছেলের কোনো খবর পেলি দুলালের মা?
-না গো দিদি, তবে দুলালকে বলেছি। আজ না হয় কাল ঠিক খবর পাওয়া যাবে চিন্তা কোরো না, আমি তো আছি।
ভরসা দেয় দুলালের মা।
-কী জানি! যে যায় সে কি আর ফিরে আসে রে?
ঘর থেকে কথাটা এসে যেন বুকে বাড়ি মারে আদুরির। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে তাই। এই দুপুরবেলায় এমন কথা শুনতে হয়! দুলালের মা আদুরির শাশুড়িকে রাগত স্বরে বলে,
-কী যে অলক্ষুণে কথা বলো দিদি! দুপুরবেলায় বউটার সামনে অমন কথা বলে কেউ! কত কষ্ট নিয়ে...
আজ মাসখানেক হলো আদুরির স্বামী নিখোঁজ হয়েছে। গ্রামে সেই নিয়ে ভালমন্দ নানা কথা শিমুল তুলোর মতো উড়ে বেড়ায়। কেউ বলে জামালপুরের কাছে কোনো এক মহিলার রূপে মজেছে। কেউ বলে অন্য একটা সংসার আছে। আসলে মাথার ব্যামো, এমন কথাও শোনা যায় কারোর মুখে। আদুরি বলে অন্য কথা। কথাটা দুলালের মাকে বলেছেও আদুরি পরশুদিন বিকালে। তবে বিশ্বাস করেনি দুলালের মা। বলেছে— ওটা বশীকরণ।
পরশু বিকেলবেলায় দুলালের মা এসেছিল আদুরির শাশুড়ির জন্য মালিশ তেল নিয়ে। কোথাকার কোন কবরেজ নাকি নাম করা, দুলালকে দিয়ে সেই কবিরাজি তেল আনিয়েছে দুলালের মা।
আদুরি বলে— আমাদের জন্য তুমি কতই করো কাকিমা! তোমার ঋণ শোধ হবার নয়।
-ছি ছি বউ, ওই কথা বলিস না। মানুষ তো মানুষের জন্যে। আপদেবিপদে যদি কাজেই না লাগলাম কী করতে বেঁচে থাকা বল।
এমন কথা শুনে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কী-ই-বা করার থাকে আদুরির? দুলালের মায়ের হাত ধরে কেঁদেছিল খানিক।
-চুপ কর বউ চুপ কর। তুই আমার মেয়ের মতো। বিপদের দিনে মেয়ের পাশে মা থাকবে না! কান্নাকাটি করিস নে। একটা কিছু ব্যবস্থা ঠিক করব।
শাড়ির আঁচলের খুঁটে চোখ মোছে আদুরি। দুলালের মা বুকে জড়িয়ে ধরে আদুরিকে।
-তোকে একটা কথা বলি বউ অন্য ভাবে নিস না যেন। বাড়িতে কোনো পুরুষমানুষ নেই, শাশুড়ির তো ওই অবস্থা! তুই কানের গয়নাগুলো খুলে রাখিস। বলবার জো আছে কার মনে কী আছে?
-খুব সামান্য সোনা আছে কাকিমা, গেলোমাসে মা এসেছিল...
-যত কম সোনাই হোক সোনা তো, বাজারে দাম আছে বউ। তুই খুলেই রাখিস, কার মনে কী আছে কে বলতে পারে!
কথাটা ঠিকই। দুলালের মা সবসময় সৎ পরামর্শ দেয় আদুরিকে।
-না এবার আসি বউ, সন্ধে নামল। আচ্ছা, বলি আমাদের ছেলের সমস্যাটা কী বল দিকি? বাড়ি ছাড়লে কেন? গ্রামে হাজার কথা শুনি, বিশ্বাস হয় না। তোর কথাটা বল দেখি।
গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করে দুলালের মা।
আদুরি বলে— কী বলি কাকিমা...
আদুরির বরের সমস্যা বড় আজব। আজ মাস দুই-তিন ধরে ঘুম নেই চোখে। রাত থাকতে উঠে বসে থাকত। ঘরে যেন শান্তি নেই, সুযোগ পেলেই পালিয়ে যেতে চায়। সবসময় সচেতন থাকত আদুরি। একদিন হঠাৎ...
-এ কথা বলি না কাউকে। কী যে করি।
-তুই চিন্তা করিস না বউ, দুলাল বাড়ি ফিরলে ব্যবস্থা একটা করব ঠিক। তবে আমার মনে হয় এটা বশীকরণ। কেউ ঠিক কিছু খাইয়েছে আমাদের ছেলেটাকে। ভাল ওঝা পেলে...
-ওই ওঝাদের বিশ্বাস করাও বিপদ! তাছাড়া আমি গ্রামের বউ, কাকে চিনি?
কিছুটা চিন্তিত হয়েই বলে আদুরি।
-কথাটা সত্যি বউ তুই কী করে...
আদুরি নদীয়ার মেয়ে। বিয়ে হয়েছে ক্যানিংয়ে। এখানকার কী-ই-বা চেনে। আশ্বাস দেয় দুলালের মা,
-জাতালো ওঝার খোঁজ সে আনবে তবে সময় লাগবে কয়টা দিন, আগে দুলাল মেলা থেকে ঘরে ফিরুক।
দুলাল মেলায় মেলায় দোকান দেয়। হাজার লোকের সঙ্গে চেনাজানা তার। মেলায় বিভিন্ন রকমের লোক আসে। ওঝা, সাপুড়ে, হাতচালানি, কবরেজ। বিশ্বাস করবার মতো কাউকে পেলে ঠিকই ধরে নিয়ে আসবে দুলাল। তবে ওই কথাটা তুই ঠিকই বলেছিস, কে ভাল কে মন্দ বিশ্বাস করা কঠিন বড়। মানুষ চেনা বড় কঠিন বউ, বড় কঠিন। যাই সন্ধে জ্বালতে হবে।
বলে চলে যায় দুলালের মা। সেদিন থেকেই কানের দুল দুটো খুলে রেখেছে আদুরি।
-বউ, ও আদুরি বলছি রান্না হলো? নাড়ি যে খিদেয় ছিঁড়ে যায়।
ঘর থেকে বলে আদুরির শাশুড়ি। উত্তর দেয় না আদুরি। সারাদিন খাওয়া আর বিছানাতেই সবকিছু। একা মানুষ আদুরি, কারই বা ভাল লাগে? শাশুড়ির কথা শুনে মনে মনে বিরক্ত হয় আদুরি।
 
ক্রমশ…
 

3 comments:

  1. ভালো লাগলো। পরের অংশের জন্য অপেক্ষায় রইলাম

    পরাণ মাঝি

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগলো
    পরাণ মাঝি

    ReplyDelete
  3. ধন্যবাদ স্যার

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)