বাতায়ন/মাসিক/কবিতাগুচ্ছ/২য়
বর্ষ/২২তম সংখ্যা/২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
কবিতাগুচ্ছ
| মোহন রায়হান | জোছনার ভেতরে বাড়ি ফেরা
কবি-পরিচিতিসহ
কবিতাগুচ্ছ
মোহন
রায়হান
"বাংলাদেশের সকল স্বৈরাচার ও সামরিক দুঃশাসনের শিকড় উপড়াতে, শোষণ-লুণ্ঠন-নিপীড়ন থেকে শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষকে মুক্ত করতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ১৩ বার জেল খেটেছেন, নির্মম নির্যাতনে রক্তাক্ত হয়েছেন, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বারবার।"
জোছনার ভেতরে বাড়ি ফেরা
জোছনার
ভেতরে বাড়ি ফিরছি ক’দিন এরকম বহুদিন আমি বাড়ি ফিরিনি।
বাড়ি বলতে
সেই যমুনার স্মৃতি:
বুকের ভেতরে বেদনার নদী
আমার মা; জেগে থাকে সারারাত
জরাজীর্ণ শীর্ণকায় ছায়া ফেলতে ফেলতে
ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে হিম মৃত্যুর গুহায়
খকুখুক কাশি আর ঘুমের মধ্যে আমার নাম ধরে
ডেকে ওঠে— খোকা এলি নাকি?
বুকের ভেতরে বেদনার নদী
আমার মা; জেগে থাকে সারারাত
জরাজীর্ণ শীর্ণকায় ছায়া ফেলতে ফেলতে
ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে হিম মৃত্যুর গুহায়
খকুখুক কাশি আর ঘুমের মধ্যে আমার নাম ধরে
ডেকে ওঠে— খোকা এলি নাকি?
জোছনার
ভেতরে বাড়ি ফিরছি ক’দিন
বাড়ি বলতে মেঠোপথ গাঁয়ের হালট
শিশিরে ভিজে থাকা ঘাস নরম চাষের ভূঁয়ে
শুয়ে থাকা হলুদ চাঁদ সারি সারি গাছ বাঁশঝাড়
ভূতুড়ে ছায়া বনফুলের গন্ধ।
জোছনার ভেতরে বাড়ি ফিরছি ক’দিন
আঁকাবাঁকা নদীটির ভাঙাচোরা কূল বেয়ে
শৈশব কৈশোর যৌবনের স্রোতে
কতদূর ভেসে এসেছি আজ এখানে
কত প্রেম-বিরহের স্মৃতি নিয়ে
আজো হেঁটে যাই এই পথে;
কতখানি
বেদনায় এই মাঠ, এই
নদী, আকাশের
অগণন তারা কালের প্রবাহে জেগে আছ?
তবু কি
শুনতে পাও কোনো পথিকের ভাঙা পাঁজরের
চাপাকান্না?
জোছনার
ভেতরে বাড়ি ফিরছি ক’দিন
চরাচর মাঠ ফসলের আদিগন্ত জমি
ভেসে যায়, ভেসে যায় চাঁদের বন্যায়
হু হু করে ওঠে মন;
এরকম জোছনায়
কোনোদিন তোমাকে নিয়ে
পথ হাঁটা হল না আমার!
সংক্ষিপ্ত
কবি-পরিচিতি
মোহন রায়হান
জন্ম ১
আগস্ট ১৯৫৬, সিরাজগঞ্জে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। বাবা ফরহাদ হোসেন ছিলেন
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর একজন সৈনিক ও নেতাজী সুভাষ
চন্দ্র বসুর সহযোদ্ধা,
সিরাজগঞ্জ কওমী জুট মিলস্, খোকশাবাড়ি হাসপাতাল ও ব্রাহ্মণবয়ড়া গ্রোয়েন বাঁধের
উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা,
দীর্ঘ ৩০ বছর খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সমাজসেবক
এবং দানবীর। মা মাহমুদা খাতুন সমাজহিতৈষিণী।
বাড়ি বলতে মেঠোপথ গাঁয়ের হালট
শিশিরে ভিজে থাকা ঘাস নরম চাষের ভূঁয়ে
শুয়ে থাকা হলুদ চাঁদ সারি সারি গাছ বাঁশঝাড়
ভূতুড়ে ছায়া বনফুলের গন্ধ।
জোছনার ভেতরে বাড়ি ফিরছি ক’দিন
আঁকাবাঁকা নদীটির ভাঙাচোরা কূল বেয়ে
শৈশব কৈশোর যৌবনের স্রোতে
কতদূর ভেসে এসেছি আজ এখানে
কত প্রেম-বিরহের স্মৃতি নিয়ে
আজো হেঁটে যাই এই পথে;
অগণন তারা কালের প্রবাহে জেগে আছ?
চাপাকান্না?
চরাচর মাঠ ফসলের আদিগন্ত জমি
ভেসে যায়, ভেসে যায় চাঁদের বন্যায়
হু হু করে ওঠে মন;
পথ হাঁটা হল না আমার!
মোহন রায়হান
একাত্তরের রণাঙ্গন থেকে উঠে আসা দ্রোহ, প্রেম, প্রতিবাদ, স্বাধীনতা, সাম্য ও বিপ্লবের দুঃসাহসী কবি মোহন রায়হান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অগ্নিঝরা একাত্তরে সিরাজগঞ্জের ‘জয় বাংলা বেতার কেন্দ্র’র কবি। বাংলাদেশের সকল স্বৈরাচার ও সামরিক দুঃশাসনের শিকড় উপড়াতে, শোষণ-লুণ্ঠন-নিপীড়ন থেকে শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষকে মুক্ত করতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ১৩ বার জেল খেটেছেন, নির্মম নির্যাতনে রক্তাক্ত হয়েছেন, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বারবার।
আশির দশকে
স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সূচনাকারী ১৪টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে গঠিত ছাত্রসংগ্রাম
পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা। ১৯৮৩-র ১১ জানুয়ারি ছাত্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে প্রথম
সামরিক শাসন ভঙ্গ করে,
হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবন ঘেরাওয়ের অভিযোগে, সামরিক
গোয়েন্দা বাহিনী চোখ-হাত বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে ২১ দিন গুম করে রেখে, নির্মম
নির্যাতন চালিয়ে মেরুদন্ড ভেঙে পঙ্গু করে দেয়। পরে দীর্ঘ চিকিৎসায় চলাচলে সক্ষম
হন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কবিতা আন্দোলনের
নেতৃত্ব দেন।
সম্মিলিত
সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, কবিতা
পরিষদের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। স্কুলিঙ্গ
সাংস্কৃতিক সংসদ, সৃজন, বাংলাদেশে
লেখক শিবির, প্রাক্সিস
অধ্যয়ন সমিতি, অরণি
সাংস্কৃতিক সংসদ, রাখাল, লেখক ইউনিয়ন, সাম্প্রদায়িকতা
প্রতিরোধ কমিটিসহ অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতৃত্বে
ছিলেন। ‘দিকচিহ্ন’ ও ‘সাওল সময়’-এর সম্পাদক এবং ‘সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশ’-এর
প্রতিষ্ঠাতা।
দুর্দান্ত সব লেখা!
ReplyDeleteপরাণ মাঝি