বাতায়ন/মাসিক/গল্পাণু/২য় বর্ষ/২৮তম সংখ্যা/২রা
ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | গল্পাণু
জগন্নাথ
মহারাজ
বিলুপ্তির
পথে
"রাজমন্ত্রী বৃদ্ধ শকুন যেন সম্মেলনের মধ্যমণি। জঙ্গলের গাছে গাছে বিচিত্র পাখিদের ভিড়। চিল-শকুনির সংখ্যা কয়েক লক্ষ! এরাই নাকি ময়ূরীর নীল পার্টির স্তম্ভ!"
ছোট্ট
চড়ুইপাখিটা নাকি পাগল হয়ে গেছে! মিছিলের উল্টো পথে হাঁটছে। সঙ্গী চড়ুইয়েরা কেউ
ভয়ে কেউ স্বার্থসিদ্ধির জন্য তার সাথে আর মিশতে চায় না। তাই একলা চলো রে...
চড়ুইয়ের
দল ময়ূর-চিল-শকুনির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আকাশে
দিব্যি উড়ে বেড়াচ্ছে। চেতনার ছাঁকনিটা ভোঁতা হতে হতে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রময় হয়ে
উঠেছে। তাই চতুর্দিক বিস্তৃত মাকড়শার সূক্ষ্মজালগুলো চোখে
যেন পড়তেই চায় না।
যে দিকে দল
ভারী সেই দিকেই গৌরহরি।
ছোট্ট
চড়ুইটি বারংবার বলে—
আমাদের নিজ অস্তিত্ব রক্ষার্থে চাই বিপ্লব।
কেউ শোনে
না। পাগল বলে হেসে সবাই পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
একদিন ভোরে
কাক কা-কা স্বরে মাইকে ঘোষণা করে— আগামীকাল
জঙ্গল মহলের মহারানি ময়ূরী রাজকাননে এক মহাসম্মেলনের আয়োজন
করেছেন।
রাজমন্ত্রী
বৃদ্ধ শকুন যেন সম্মেলনের মধ্যমণি। জঙ্গলের গাছে গাছে বিচিত্র পাখিদের ভিড়। চিল-শকুনির সংখ্যা কয়েক লক্ষ! এরাই নাকি ময়ূরীর নীল পার্টির স্তম্ভ! আস্তে আস্তে লাগাম
ছাড়া ঘুড়ির মতো ময়ূরী উড়ছে আর লাটাই হাতে কুৎসিত হাসছে শকুনের দল। হঠাৎ
মুথাঘাসের বুকে বারুদের গন্ধ, বাঁচাও বাঁচাও অসহায় আর্তনাদ। রক্তের
বন্যা। চড়ুইদের বংশ যেন বিলুপ্তির পথে। মৃতপ্রায় অবশিষ্টরা অসহায় নিঃস্ব বুকে একরাশ কালো মেঘ নিয়ে চলেছে শকুনদের সাথে ভাগাড়ের দিকে...
কর্ণে শুধু
বারংবার প্রতিধ্বনিত হয়ে ওঠে ছোট্ট চড়ুয়ের সেই শব্দগুচ্ছ— আমাদের নিজ অস্তিত্ব রক্ষার্থে চাই বিপ্লব… বিপ্লব...
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment