বাতায়ন/ধারাবাহিক
উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৩৫তম সংখ্যা/৪ঠা পৌষ, ১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
মউ
[১৪তম পর্ব]
"সুখ মনে মনে ভাবে, এই মেয়েটাকে হাত ছাড়া করা যাবে না, গুছিয়ে রাখতে হবে। শুধু ওই একটা ব্যাপার ছাড়া।"
পূর্বানুবৃত্তি বন্যা পরিস্থিতিতে
শুধু দুজনে শুভ্রার বাড়িতে শুভ্রার সঙ্গে রমণ করার সময় মায়ের কথা একবারও
মনে না পড়ায় বিস্মিত হয় সুখ। এইসব স্মৃতি রোমন্থন করতে করতেই পৌঁছে
গেল শম্ভু দাসের স্মরণসভায়। তারপর…
-সুখ, অনেকদিন ধরেই আমি লক্ষ্য
করছি তোমার কবিতায় গীতিকাব্যের একটা ধাঁচ আছে, তুমি যদি সনেটে হাত দাও নাম করবে।
‘প্রত্যাশা’ শিরোনামে যে কবিতাটা তুমি পাঠিয়েছ সেই কবিতাটা আমার কাছেই থাক। তুমি
বরং একটু চেষ্টা করো ওই কবিতাটাই মাত্রা এবং লাইন ঠিকঠাক করে সনেট করতে পারো কি
না?
সুখ চেষ্টা করে লিখেছিল এবং
শম্ভুদা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলেন বললেও কম বলা হয়। সেই প্রথম সুখের সনেট লেখা,
যদিও সুখ মনে করে সনেট না চতুর্দশপদী তার বিচার করবেন বৈয়াকরণরা। শম্ভুদা তখন এই
ধাঁচের কবিতাকে সনেটই বলতেন পরবর্তী সময়ে তিনি বলতেন চতুর্দশপদী।
শুধু সুখ নয় এমন অনেককেই তিনি
উৎসাহ দিয়ে সাহিত্যের আঙিনায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। যারা হয়তো নিজেরাও কোনদিন ভাবেনি
তারা কবিতা লিখবে শুধু মাত্র শম্ভুদার উৎসাহ ও প্রেরণায় তাদের অনেকেই এখন কবি।
একবার শম্ভুদা খুব দুঃখ করে
বলেছিলেন,
-সুখ জানো, সুন্দর নামটা যত
সুন্দরই হোক-না-কেন মানুষটা ততই অসুন্দর। আমার একটা প্রবন্ধ চুরি করেছে সুন্দর।
এটা সুন্দরের কাছ থেকে কোনদিন আশা করিনি। ছি-ছি এটা কী করল সুন্দর! একসঙ্গে
ওঠাবসা, একসঙ্গে চলা। শুধু আমারই নয় সূর্য ভট্টাচার্যের লেখা একটা প্রবন্ধও সুন্দর
নিজের নামে চালিয়েছে। কত বড় দুঃসাহস!
সুখ বলেছিল,
-আপনারা প্রতিবাদ করেননি কেন!
শম্ভুদা বলেছিলেন,
-করেছিলাম, প্রতিবাদের উত্তরে
সুন্দর জানিয়েছে সূর্য ভট্টাচার্যের লেখায় ওকে অনেকটা এডিট করতে হওয়ায় ও লেখাটা
নিজের নামে ছাপিয়েছে।
এ কথা শুধু সুখকেই নয় যারাই
শম্ভুদার কাছের মানুষ সকলকেই বলেছিলেন। সেই থেকে সুন্দর-দার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ
রাখেনি সুখ। সুখ কুম্ভিলকদের একেবারেই মানতে পারে না। সে মনে করে এরা
সাহিত্যচর্চার নামে আসলে বাংলা সাহিত্য তথা বাংলা ভাষার ক্ষমাহীন ক্ষতি করে
যাচ্ছে।
শম্ভুদা তার প্রতিভা অনুযায়ী
এক্সপোজার পেলেন না। শেষের দিকে কাছের প্রায় সকলকেই তিনি বলতেন, তার বাড়ির জন্য,
তার স্ত্রী ও মেয়ের জন্য তিনি কাজে কনসেনট্রেট করতে পারছেন না। আসলে ওরা দীর্ঘ বছর
ধরেই মানসিক অনিশ্চয়তা, অস্থিরতায় ভুগছেন তা শম্ভুদার কবি-স্বভাবগত মহিলা আসক্তির
জন্য হোক আর যে কারণেই হোক। কবিপত্নীদের জীবনে আসলে শান্তি নেই। সুখের মনে হয় এই
জন্যই কবি-শিল্পীদের বিয়ে করতে নেই। তাদের জন্য বোহেমিয়ান, উড়নচণ্ডী জীবনই ভাল।
কবি-শিল্পীদের মনের মতো আদর্শ পত্নী পাওয়া আর সোনার পাথরবাটি পাওয়া একই কথা। সেদিক
থেকে দেখতে গেলে সুখ বিয়ে-থা না করে একরকম ঠিকই আছে। এমনকি শম্ভুদা কোনও
অনুষ্ঠানেও অ্যাটেন্ড করতে পারতেন না ওনাদের জন্য। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক, কাউকেই
যেন এমন পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়।
১৮
মউ এখন সুখের সঙ্গে নাটক করছে।
নাটকের ব্যাপারে মউ যথেষ্ট সিরিয়াস। রিহার্সাল, শো কোনো ক্ষেত্রেই সুখের কথা
অমান্য করে না, অবাধ্য হয় না মোটেই। সুখ নিজেও আশ্চর্য হয়ে যায়। বিভিন্ন চরিত্রের
বৈশিষ্ট্য একবার বললেই বা সিকোয়েন্সটা বুঝিয়ে দিলেই রপ্ত করে নেয়। মেয়েটার মধ্যে
সেন্স আছে। সুখ লেখালিখি এবং নাটকের জগতে আসার পর থেকে এমন একটা মেয়ের সন্ধান কতই
না করেছে, কিন্তু কোথাও পায়নি। সব এটা হয় তো সেটা হয় না, সেটা হয় তো এটা হয় না!
তার ওপরে হাজার বায়নাক্কা। আগেই বলে দেবে রিহার্সাল-শোতে টাকা চাই, গাড়িভাড়া চাই
ইত্যাদি। অথচ পারফর্ম্যান্সের ব্যাপারে কিছু বলা চলবে না, যেমন পারবে তেমন করবে!
সুখ মনে মনে ভাবে, এই মেয়েটাকে হাত ছাড়া করা যাবে না, গুছিয়ে রাখতে হবে। শুধু ওই
একটা ব্যাপার ছাড়া।
একদিন মউ ফোন করে আনন্দে
লাফাতে-লাফাতে এসে বলল,
-স্যার, তুমি আমার জীবনে ভীষণ
লাকি।
সুখ মজা করে বলল,
-কেন রে! আমি আবার তোর কোন্ পাকা
ধানে মই দিয়েছি!
ক্রমশ

ধারাবাহিক তার আঙ্গিকে শাখা প্রশাখায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাক পাশ্ববর্তী গল্প পড়ছি। সব পথ ঘুরে চলেছি, দেখি কেমন সে পথ ....
ReplyDeleteগত পর্বে সুখের লেখা লেখি জীবনে শম্ভু দার উপস্থিতির কথা জেনেছিলাম, অবশ্য তখন শম্ভু দা চলে গেছেন। আজ শম্ভু দার এই লেখার কথা, তাঁর আচরণের কারনে পারিবারিক জীবনে অসুবিধার কথা পড়তে বিশেষত লেখার জগতের রাজনীতির কথা পড়তে ভালো লাগল।
ReplyDeleteনাট্য পরিচালনা সুখের যে আরো একটা দিক সেটাও ভালো লেগেছে পড়ে। মউ , অভিনেত্রী রুপে এবং নাট্যকার সুখের কথা আরো জানার ইচ্ছা রাখলাম ।