প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দেবীর বিসর্জন | বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ দেবীর বিসর্জন তুমি ...

Saturday, November 11, 2023

নাটক | নিরুদ্দেশ | অজয় দেবনাথ

বাতায়ন/শিল্প-সংস্কৃতি/১ম বর্ষ/২৪তম সংখ্যা/২৪শে কার্তিক, ১৪৩০

শিল্প-সংস্কৃতি | নাটক
অজয় দেবনাথ

প্রেমেন্দ্র মিত্রের কাহিনি ‘নিরুদ্দেশ’ অবলম্বনে নাটক

নিরুদ্দেশ

নাট্যরূপ: অজয় দেবনাথ

চরিত্রলিপি: লেখক, সোমেশ, বাবা, মা, ছেলে, ১ম জন (খবরের কাগজের অফিসে), ২য় জন (খবরের কাগজের অফিসে), শোভন, জমিদার (শোভনের বাবা), শোভনের মা, নায়েব, খাজাঞ্চি, জমিদারবাড়ির কর্মচারী।

[অভিজাত সম্পন্ন বাড়ির বৈঠকখানা। ঘরে একটি জানালা দেখা যাচ্ছে। শীতকালীন বৃষ্টির দুপুর, মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি পড়ছে, মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মঞ্চে লেখক অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন।]


লেখক:           অসহ্য! আকাশের অবস্থা দেখে কে বলবে এখন শীতকাল! বৃষ্টিটাও ঠিক মতো হচ্ছে না, আবার ছেড়েও যাচ্ছে না। উষ্ণায়ণের প্রভাবমানুষ প্রকৃতির খেয়াল রাখবে না তো প্রকৃতির বয়েই গেছে মানুষের মন-মর্জির পরোয়া করতে।

[কলিং বেল-এর শব্দ শোনা যায়।]

লেখক:        এখন আবার কে এল! সেলস্‌ম্যান? এই এক উৎপাত। সময় নেই অসময় নেই...

[কলিং বেল-এর ঘনঘন শব্দ।]

লেখক:        কে...? আসছি আসছি। এক মুহূর্ত তর সয় না।

[লেখক (নেপথ্যে) দরজা খোলেন। সোমেশের প্রবেশ।]

লেখক:        আরে সোমেশ, এসো এসো। বোসো। কেমন আছ বলো?

সোমেশ:       ভাল।

লেখক:        যাক ভালই হ’ল। আমি তো ভেবেই পাচ্ছিলাম না, আজকের দিনটা কীভাবে কাটাব?

[সোমেশ কোনও উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। একটা সিগারেট ধরিয়ে একমনে কী যেন ভাবছে।]

লেখক:        খেয়ে এসেছ? খাবে?

সোমেশ:       না।

লেখক:        চা, কফি আনতে বলি?

সোমেশ:       আমার জন্য ব্যস্ত হয়ো না।

লেখক:        এ কী অসময়ে বৃষ্টি শুরু হলো বলো তো! সবই পরিবেশ দূষণের ফল।

[সোমেশ কোনও উত্তর দেয় না। লেখক খবরের কাগজটা উলটেপালটে সোমেশের সামনে এগিয়ে দেয়।]

লেখক:        আশ্চর্য একটা ব্যাপার দেখেছ?

সোমেশ:       কী?

লেখক:        আজকের কাগজে একসঙ্গে সাত-সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন।


[সোমেশ কৌতূহলহীন ভাবে পা ছড়িয়ে বসে সিগারেটের ধোঁওয়া ছাড়তে লাগল।]

লেখক:        নিরুদ্দেশের এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে আমার হাসি পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা কী হয় জান তো?

[মঞ্চের এই অংশের আলো ধীরে ধীরে কমে আসবে। অন্য একটি অংশ ধীরে ধীরে আলোকিত হবে। খবরের কাগজের অফিস। দুজন অফিসে কাজ করছেন। বাবার প্রবেশ। বিমূঢ়ভাবে একটু এদিক-ওদিক ঘুরে কর্মরত ১ম জনের প্রতি।]

বাবা:          আপনাদের কাগজে একটা খবর বার করতে চাই।

১ম জন:      খবর! কেন আমাদের খবরগুলো পছন্দ হচ্ছে না! আমরা কী এতদিন রামযাত্রা বার করেছি!

২য় জন:      আহা কী করছ! ভদ্রলোক কী বলতে চান, শোনোই না! বসুন আপনি। বলুন কী খবর বলছিলেন?

বাবা:         আজ্ঞে ঠিক খবর নয়, এই একটা বিজ্ঞাপন।

২য় জন:      বিজ্ঞাপন? কীসের বিজ্ঞাপন? কতটা স্পেস দরকার? কপি এনেছেন?

বাবা:         আজ্ঞে ঠিক বিজ্ঞাপন নয়—আমার ছেলে বাড়ি থেকে চলে গেছে—

[ফ্ল্যাশ-ব্যাক। খাটে মা শুয়ে আছেন, ফোঁপাচ্ছেন। বাবা অফিস থেকে ফিরলেন। বাবাকে দেখা মাত্র মায়ের ফোঁপানি কান্নায় পরিবর্তিত হল।]


বাবা:          সমানে প্যানপ্যান কোরো না তো। কাল রাত থেকে সমানে চালিয়ে যাচ্ছ, ওই দেখে অফিস যেতে হল, ফিরে এসেও সেই এক!

মা:           ছেলেটা আমার চলে গেল।

বাবা:         তাও গেলে তো বাঁচতাম। আজ রাতেই বাবু সুড়সুড় করে ফিরে আসবেনএমন বিনি পয়সার হোটেল পাবে কোথায়?

মা:           খাবার সময় অমন করে না বললেই চলছিল না?

বাবা:         তোমার আশকারাতেই তো উচ্ছন্নে গেছে। মাথাটি তো তুমিই খেয়েছ আদর দিয়ে।

মা:           তা বলে ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে?

বাবা:         অত রাত্রেও বাবুর আসার সময় হলো না। গতবারে ফেল করে মাথা কিনেছেন। এবারও কী কৃতার্থ করবেন তা বুঝতেই পারছি। আমার পয়সাগুলো তো খোলামকুচি, তাই নবাবপুত্তুর যা খুশি তাই করছেন। বেরিয়ে যেতে বলেছি বেশ করেছি।

মা:           এই দারুণ শীতে সারারাত-দিন কোথায় কী করছে কে জানে। কী করে বসে আমার সেই ভয়।

বাবা:          হ্যাঁ ভয়! অত মুরোদ নেই, তোমার ছেলে কিচ্ছু করবে না। দিব্যি আছে কোনও বন্ধুর বাড়ি। অসুবিধে হলেই এসে দেখা দেবে।

মা:            কীরকম অভিমানী জানো তো। [হাপুসনয়নে কান্না জোড়ে।] ওগো তুমি এমন কেন? তুমি একবারও কোনও খবর নিলে না!

বাবা:          না আর থাকতে দিলে না। এ অশান্তির চেয়ে বনবাস ভাল।

[ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড।]

বাবা:         বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা আপনাদের অফিসে এসেছি। এখন আপনারাই যা ভাল হয় করুন।

২য় জন:      বুঝেছি। আচ্ছা আপনি ওর বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে যান, বাকিটা আমরা সাজিয়ে নেব।

বাবা:         একটু ভাল করে লিখে দেবেন। ওর মা কাল থেকে জলগ্রহণ করেনি।

২য় জন:      সে বলতে হবে না, এমন লিখে দেবো, যে পড়ে আপনার ছেলে কেঁদে ভাসিয়ে দেবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

[এই জোন-এর লাইট কমে যাবে। সিন চেঞ্জ। আবার বাড়ির অংশ দেখা যাবে। মা খাটে শুয়ে আছে। বাবা প্রবেশ করে।]

বাবা:          যাক, সব ব্যবস্থা করে এলাম। বিজ্ঞাপনটা কালকের কাগজেই ফলাও করে ছাপা হবে। নাও এবার ওঠো দেখি, কিছু খেয়ে নাও।

[ছেলের প্রবেশ।]

মা:           কী রে বাবু এলি? অমন অভিমান করতে আছে বাবা?

[খাট থেকে নেমে ছেলের দিকে এগিয়ে যায়।]

মা:           বাবা না হয়, রাগের মাথায় দুটো কথা বলেই ফেলেছে। তাই বলে অমন করে চলে যেতে আছে?  আর কখনও অমন করবি না। আয় খেয়ে-দেয়ে বিশ্রাম কর।

ছেলে:        আমি থাকতে আসিনি, আমার বইগুলো দরকার। বইগুলো নিয়েই চলে যাব।

মা:           তা যাবি বই-কি; অমনি কুলাঙ্গার তো হয়েছিস। কোনো ছেলে যেন আর বকুনি খায় না। তুই একেবারে পির হয়েছিস? কাল সারারাত দুচোখের পাতা এক করেননি তা জানিস? ভেবে ভেবে চেহারাটা আজ কী হয়েছে দেখউনি তেজ করে চলে যাবেন।

বাবা:          আহ্‌ আর বকাবকি কেন?

মা:            তুমি থামো। অত আদর ভাল নয়। একটু বকুনি খেয়েছেন বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এত বড় আস্পর্ধা!

[এই অংশ অন্ধকার হয়ে, অন্য অংশে লেখকের বৈঠকখানা দেখা যায়]


লেখক:        অধিকাংশ নিরুদ্দেশের ইতিহাস এই। (সোমেশকে নিরুত্তর দেখে) তোমার কী হয়েছে বলো তো? মিছিমিছিই আমি একলা বকে মরছি।

[সোমেশ সিগারেটের শেষ অংশটি অ্যাশট্রেতে গুঁজে দেয়।]

সোমেশ:       এই বিজ্ঞাপনের পিছনেও অনেক ট্র্যাজেডি থাকে, তুমি জানো না।

লেখক:        তা থাকে আমি অস্বীকার করছি না। কখনও কখনও সত্যি যে যায় সে আর ফেরে না।

সোমেশ:       [হেসে] না, তা বলছি না। ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্র্যাজেডির কথা আমি জানি।

লেখক:        তার মানে?

সোমেশ:       শোনো বলছি।

[বাইরে প্রবল বৃষ্টি পড়ছে।]

সোমেশ:       জমিদার বংশের একটি ছেলেকে আমি জানতাম, শোভন। বাড়ি ছাড়ার জন্য, অভিমান নয় একটা ছুতো পেলেই হলো। পৃথিবীতে দু-একটা লোক আসে, জন্ম থেকেই নির্লিপ্ত। কঠিন হৃদয় নয়, বরং তৈলাক্ত। পিচ্ছিল বলে কোথাও ধরা পড়ে না, কিছুই তাদের মনে দাগ দিতে পারে না।

লেখক:         ভূমিকাই তো করে যাচ্ছ, মূল ট্র্যাজেডিটা তো শুনি।

সোমেশ:        হ্যাঁ, শোভন তো নিরুদ্দেশ হল। এদিকে তার রাশভারী জমিদার বাবা, আর শান্ত-নিরীহ অমায়িক মা পড়লেন আতান্তরে।

লেখক:         স্বাভাবিক।

সোমেশ:        দিনের পর দিন স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বেরুতে থাকল ধারাবাহিক ভাবে দেখলে একটি কাহিনি মনে হয়মনে হয় ছাপার লেখা কাতর স্বরে যেন আর্তনাদ করছে


[মঞ্চের অন্য একটা অংশে কোনও সোফায় শোভনের মুমূর্ষু মা বসে আছেন। শুধু তার মুখটুকু দেখা যাবে সংলাপগুলো বলার সময়]

শোভনের মা:  শোভন, ফিরে আয়। তোকে ছেড়ে আমি কোনওদিন যে থাকিনি বাবা। আর আমাকে কষ্ট দিস না।

সোমেশ:       ধীরে ধীরে মায়ের কাতর অনুরোধ হতাশ দীর্ঘশ্বাসের মতো খবরের কাগজের পাতায় যেন মিলিয়ে গেল।


[শোভনের মা ক্রমশ এলিয়ে পড়েন, যেন আরও অসুস্থ। কণ্ঠে আরও ব্যাকুলতা।]


শোভনের মা:  শোভন.. বাবা ফিরে আয়। আর যে পারি না।

সোমেশ:      তারপর শোনা গেল পিতার গম্ভীর স্বর, একটু যেন কম্পিত তবু ধীর ও শান্ত

জমিদার:      শোভন ফিরে এসো। তোমার মা শয্যাগত। তোমার কি এতটুকু কর্তব্য-বোধও নেই!

সোমেশ:      বিজ্ঞাপন তারপরেও কিন্তু থামল না। পিতার স্বর ভারী হয়ে আসছে, মনে হয় যেন গলাটা ধরা।

জমিদার:      শোভন, এবার না এলে তোমার মাকে আর দেখতে পাবে না।

সোমেশ:      শোভনের মন কিন্তু গলে না। পিতার স্বর কাতরতা থেকে দুর্বলতায় পৌঁছে যায়।

জমিদার:      শোভন, জানো না আমাদের কেমন করে দিন যাচ্ছে! এসো, আর আমাদের দুঃখ দিয়ো না।

সোমেশ:      বিজ্ঞাপন ক্রমশ হাহাকার হয়ে উঠল। তারপর রূপ বদলে শোভনের চেহারার বর্ণনা আর নগদ পুরষ্কার ঘোষণা। জীবিত বা মৃত—সন্ধান দিতে পারলেই পুরষ্কার।

লেখক:        তারপর?

জমিদার:      শোভন, তোমার মার সঙ্গে আর বুঝি তোমার দেখা হলো না। তিনি শুধু তোমারই নাম করছেন এখনও।

লেখক:        মা মারা গেলেন?

সোমেশ:       বিজ্ঞাপন থেমে গেল। শোভন হয়তো বিচলিত হয়ে পড়ল। ফিরে গেল বাড়ি। ইতিমধ্যে আরও বছর দুই অতিক্রান্ত।


[জমিদার বাড়ি। বার-বাড়ির অংশ। নায়েব, খাজাঞ্চি যে যার কাজে ব্যস্ত। শোভনের প্রবেশ।]


নায়েব:        কাকে চাই?

শোভন:       কাউকে না, বাড়িতে যেতে চাই।

নায়েব:        ওহ্‌ কিন্তু এত তাড়া কীসের? আসুন, একটু বিশ্রাম করুন।

শোভন:       সে কী? কী হয়েছে নায়েব-মশাই?

নায়েব:        না না, হয়নি কিছু।

শোভন:       [ব্যাকুল ভাবে] মা ভাল আছেন?

নায়েব:       [অদ্ভূত হেসে] ভাল আছেন বই-কি। বসুন এখানেই বসুন।

শোভন:       কিন্তু ভিতরে গেলেই তো হয়।

নায়েব:       [রূঢ় স্বরে] না না, বসুন এখানেখাজাঞ্চি-মশাই, ইনি ভিতরে যেতে চাইছেন!

খাজাঞ্চি:      অ ইনি আজই এসেছেন বুঝি?

নায়েব:       হ্যাঁ, এইমাত্র।

শোভন:      আপনারা কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন। মার কী কিছু হয়েছে? বাবা কেমন আছেন?

নায়েব:       তাঁরা সবাই ভাল আছেন। কিন্তু এখন তো আপনার সঙ্গে দেখা হবে না।

শোভন:      [ক্রুদ্ধ ভাবে] কেন দেখা হবে না? আপনাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি চললুম। [ভিতরে যাবার জন্য দরজার দিকে যেতে উদ্যত।]

নায়েব:       [দরজার কাছে আড়াল করে শান্তভাবে] দেখুন, অযথা কেলেঙ্কারি করে লাভ নেই। তাতে ফল হবে না কিছু।

শোভন:      [বিস্মিত ভাবে] আপনারা কি আমাকে চিনতে পারছেন না? [সকলে নীরব] আমি শোভন, বুঝতে পারছেন না কেন আমি শোভন?

নায়েব:        আপনি একটু দাঁড়ান, আমি আসছি। [নেপথ্য থেকে একটা ফটো এনে শোভনকে দেন।]

নায়েব:        চেনেন একে?

শোভন:       এ তো আমারই ফটো। আপনারাই মিলিয়ে দেখুন ভাল করে। নাহ্‌, এ অসহ্য। [চুল মুঠি করে বসে পড়ে।]

নায়েব:        দেখুন, কিছু মনে করবেন না। আপনার সঙ্গে একটু মিল আছে সত্যি। কিন্তু এর আগে আরও দুজনের সঙ্গে ছিল। মায় জড়ুল পর্যন্ত। আমাদের এ নিয়ে গোলমাল করতে মানা আছে। আমরা কিছু হাঙ্গামা করব না। আপনি এখন চলে যেতে পারেন।

শোভন:       [কাতর ভাবে] একবার শুধু মা-বাবার সঙ্গে দেখা করব। আপনারা বিশ্বাস করছেন না। কিন্তু একবার আমায় শুধু দেখা করতে দিন।

নায়েব:        শুনুন তাহলে, সাতদিন আগে শোভন মারা গেছে। তার মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি।

শোভন:       [বিদ্রূপাত্মক হেসে] কেমন করে মারা গেল?

নায়েব:        মারা গিয়েছে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে অপঘাতে। নাম-ধাম পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু যারা দুর্ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল তাদের কয়েকজন খবরের কাগজে আমাদের বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের সব কথা জানিয়েছেন। হাসপাতালেও আমরা খবর নিয়েছি। সেখানকার ডাক্তারের বর্ণনাও আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে।


[জমিদারের প্রবেশ, যেন ভিতর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইরে কোথাও যাচ্ছেন। শোভন দৌড়ে তার কাছে যায়।]

শোভন:       বাবা!


[জমিদার থমকে দাঁড়ালেন।]


শোভন:       বাবা আমায় চিনতে পারছ?

জমিদার:      কে?

নায়েব:        [শোভনের কাঁধে দৃঢ় হাত রেখে] না, কেউ না। সেই সেবারের মতো—এই নিয়ে তিনবার হলো।

খাজাঞ্চি:       আমরা আসতে দিইনি, হঠাৎ আমাদের অবাধ্য হয়ে..

জমিদার:      কিছু বোলো না, চলে যেতে দাও।


[শোভন বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভিতর বাড়ি থেকে একজন কর্মচারী এসে নায়েবকে কী যেন বলল এবং নায়েবকে অনেকগুলো টাকা দিল। নায়েব টাকাগুলো শোভনের হাতে গুঁজে দিলেন।]

নায়েব:        আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। গিন্নি-মা মৃত্যুশয্যায়তিনি শোভনের মৃত্যুসংবাদ জানেন না। জমিদারবাবু অনুরোধ করেছেন, শোভন সেজে আপনাকে একবার গিন্নি-মার সঙ্গে দেখা করতে হবে, যাতে তিনি শান্তিতে চোখ বুজতে পারেন। আপনার এতে কোনও ক্ষতি হবে না।


[অবিশ্রান্ত বৃষ্টি ও বজ্রপাতের শব্দ শোনা ও দেখা যায় জানালা দিয়ে।]

 

লেখক:        সোমেশ, তোমার ডানদিকে কানের কাছে একটা জড়ুল আছে না!

সোমেশ:       সেই জন্যই তো গল্পটা বলা এত সহজ হলো।

লেখক:        ছিছি সোমেশ, মানুষ নিজের স্বার্থের বাইরে আর কি কিছুই ভাববে না? ছি!

 

 

যবনিকা

16 comments:

  1. বেশ ভালো লাগল- জয়িতা

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমাকে অনেক ধন্যবাদ জয়িতা, ভাল থেকো।
      অজয়দা।

      Delete
  2. একটি অসাধারণ গল্পের
    যথাযথ দৃশ্যায়নে
    নিখুঁত নাট্যরূপায়ন ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার পরিচয় পেলে ভাল লাগত বন্ধু।
      অজয় দেবনাথ।

      Delete
    2. আমি উদয় মণ্ডল।

      Delete
    3. ধন্যবাদ উদয়বাবু, প্রিয় কবিবন্ধু।

      Delete
  3. দীপক বেরা।November 18, 2023 at 9:04 PM

    কাহিনীর নাট্যরূপান্তর ভীষণ ভালো লাগল। খুব ভালো ও ভাবনাপ্রসারী কাজ হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ দীপক-দা। ভাল থাকুন।

      Delete
  4. দীপক বেরা।November 18, 2023 at 9:05 PM

    কাহিনীর নাট্যরূপান্তর ভীষণ ভালো লাগল। খুব সুন্দর ও ভাবনাপ্রসারী কাজ হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ দীপক-দা। ভাল থাকুন।

      Delete
  5. সত্যিই নাটকীয়তা ফুটে উঠেছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার পরিচয় জানতে পারলে ভাল লাগত।

      Delete
  6. গল্পটা পড়াতে গিয়ে আজও আমি আনমনে হারিয়ে যাই নিরুদ্দেশের পথে,,, অন্তর তাড়িত বেদনা তোলপাড় করে দেয় আমার প্রকৃতিকে,,,, খুব ভালো নাট্যরূপ দিয়েছেন 🙏 ---আমি উজ্জ্বল পায়রা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কী বলে ধন্যবাদ জানাব জানিনা। শুধু এটুকু বলি এমন সিরিয়াস পাঠক যে কোন লেখকেরই কাম্য। খুব ভাল থাকুন।
      অজয় দেবনাথ।

      Delete
  7. কাহিনির নাট্যরুপ অসাধারণ সুন্দর অজয়দা। আপনার জন্য শুভ কামনা

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ আপনাকে কিন্তু আপনার পরিচয় পেলে ভাল লাগত।

      Delete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)