বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী প্রথম ভালবাসা ...
সম্প্রতি সাহিত্যপ্রেমীর সেরা উৎসব কলকাতা বইমেলা সম্পন্ন হলো। গোটা বছর ধরে প্রতিটি সাহিত্যপ্রেমী মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। বইয়ের সঙ্গে যে-কোনো ভাবে যুক্ত মানুষের ব্যস্ততা শত কাজের মধ্যেও বাড়তে থাকে।
আমার দুচোখ
ভরা চেনা পথ ভুল হয়ে যায়,
কোথায় কী গাছ ছিল,
ছায়া ছিল, ভুল হয়ে যায়,
রাতজাগা
বইগুলি ভুল হয়ে যায়,
আমার নিজের দেশ ভুল হয়ে যায়।
অভ্যাসবশত খবরের কাগজ
নিয়ে বসতেই প্রায় রোজের সমস্যা, ব্লাডসুগার— বাইফোকাল চশমাও পক্ষপাতদুষ্ট। প্রতিমাসে পাওয়ার পালটানো
কেরানি-রোজগারে অসম্ভব। সবে চল্লিশ, দেখে মনে হয় পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন। পাকাচুল।
প্রায় প্রতিটি বাঁকেই প্রহরা, চাও বা না চাও। যেতে হবে অন্দরের আলপথ ধরে। তার দুপাশের তান্ত্রিক হুংকার উপেক্ষা কোরে। বেহুলার ভেলা হয়ে। সর্পিলতা মাড়িয়ে মাড়িয়ে। তবে সেই দ্বীপ। পরিচিতা সেই নারী, নিদ্রা-বিনিদ্রায় যার অনিবার্য
আমাদের কথা
ছিল প্রতি নভেম্বরে একটা করে চিঠি দেবার। তবে কি পরস্পরের টান পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে
বিজীত? নদী
কি সমুদ্রের কাছাকাছি এসে গেছে? আমাদের ঘন ঘন চিঠি আদানপ্রদান সেই কথাই তো বলছে তাই না!
জানো তো আজকাল ভীষণ কবি হতে ইচ্ছে করে। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ব্যালকনিতে এসে বসি।
ইলেকট্রিক আলো ভাল লাগে না। মনে হয় জীবনানন্দের সেই ধূসর মাঠ
পেরিয়ে সোনালি ডানার চিল আর শান্ত পেঁচার সাথে দেখা করি। কেমন ছিল ধান ভরা মাঠ, মৃত
নক্ষত্রের সারি, কেমন ছিল কবির কুয়াশার পথ!
সেলিনা নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল। ছ’মাসের আসমানকে কোলে তুলে একবার তাকাল পিছন ফিরে। সংসারটা আর করা হল না। ফিরতে হচ্ছে মায়ের কাছেই। একদিন মায়ের হাজার নিষেধ সত্ত্বেও আফজালকে বিয়ে করেছিল ভালবেসে। ভেবেছিল ওর ভালবাসায় সব খারাপ ধুয়ে মুছে যাবে। কিন্তু ওই লটারির এক বিষাক্ত নেশায় আজ সর্বশান্ত আফজাল।
কী বলে
সম্বোধন করব তোমায় জানি না, কারণ তোমার নামই জেনেছিলাম অনেকদিন পর... তখন যেন সম্বোধন আর নাম দুটোই পরিপূরক হয়ে উঠেছিল, তাই প্রিয় আদৃত না বলে... শুধু আদৃত
নামটাই মনে… মনের আনাচেকানাচে ঘোরাফেরা করছিল।
শনি গেল, রবি এল, সোম গিয়ে আজ
মঙ্গলবার। সংক্রান্তি,
মাসপয়লা কেটেছে কিন্তু আজ মঙ্গলে বাড়ি ফিরতে পারলে হয়? কেন এমন মনে
হচ্ছে?
তোমার সঙ্গে
তুমুল বর্ষায় ভিজেছি সেদিন।
আসলে ভিজে
যাওয়ার ঘটনাটা সত্যি রটনা নয়।
আসলে তুমুল
আন্দোলনে নিজেকে আবিষ্কার করেছি ভীষণ।
সেদিন সন্ধ্যায় গেলাম কৃষ্ণকলির
আখড়ায়। দেখি প্রেমময়ী গৈরিক সাজ, হৃদয় নিভৃত রস অমৃত কথা...
-আজ মনে পড়ল ঠাকুর?
-তুমি যে কাঁদাও রসিকা। তাই তো, বারে বারে ছুটে আসি।
-আজ যে রাস… এ কী পরীক্ষা! দ্বারকার কৃষ্ণ দেখি দ্বারে, বৃন্দাবনের
কৃষ্ণও যে বাঁশরি বাজিয়ে ডাকে কুঞ্জবনে...
ক্রুজের
ডেকের উপর দাঁড়িয়ে শ্বেতা। নীল নদের উপর ভাসমান ক্রুজ। দূরে ভেসে চলেছ অনেকগুলো
পাল তোলা ফেলুকা। নানা রঙের পোশাক পরা মানুষ তাতে বসে রয়েছে। নীলের উপর দিয়ে
উড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য গাঙচিল। দুপাশে ব্যস্ত জনপদ, অসংখ্য মানুষ আর
গাড়ি, যার
যার কাজে ছুটে চলেছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত,
অবশেষে
বুঝলাম—
নীল আর
দৃষ্টি, দূরত্বের
সৃষ্টি।
মোহ
ভাঙা-গড়া, তৃপ্তি।
স্তব্ধতার
আড়ালে গানের ধাঁধা,
বৃষ্টি ভেবে
তোমাকে ছুঁই
দেখি বৃষ্টি
না তুমি একটা জলবই
নদীর জলে
মুখ ধুয়েছি, নদীর
হাওয়ায় বুক
অন্ধ দিনের
শেষে আমার একমাত্র সুখ।
কে আমাকে ঢিল ছুঁড়েছে, কে দেয় ঘরে আগুন
দেখতে দেখতে
দুবছর হয়ে গেল স্বামীর ঘর ছেড়েছে কণিকা। বুঝিয়ে নিয়েছে নিজেকে, ফিরবে না আর
কোনোদিন। তবে পিছুটান রয়েই গেছে, সে বুঝি আর যাবার নয়।
সত্য
দাঁড়ায় মুখোমুখি একা ডাকাবুকো
যুদ্ধ
শেখায় কৌশলে রমণে রমণে
রম্য
কোষ-স্নায়ু-রক্ত-মেদ-মজ্জা মন্থনে মন্থনে
সোরা সাইকোসিস
সিফিলিস দহনে দহনে
সবাই জানে আমি ভালমানুষ। কিন্তু আমি তো আদৌ ভালমানুষ না। তাহলে এমনটা সবাই ভাবে কেন? কারণ মুখোশ। আমি একটা মুখোশ পরে থাকি। এই কৌশল আমি নিয়েছি সুফিয়া কামালের কাছ থেকে। কলকাতায় বোরখা পরে সুফিয়া যখন 'ধুমকেতু'র অফিসে ঢুকতেন কাজী নজরুল ইসলাম মুচকি মুচকি হাসতেন। সুফিয়া ঈষৎ হেসে বলতেন কাজী দা'র
কারো চোখে
পড়েছিল চোখ—
স্থির
দৃষ্টি ক্ষণিকের দু’জনের,
কবিতা প্রেমের
নাম ভালবাসা আকন্দ ফুল
অগ্নি অবিনাশী বায়ু জল কবিতা অসম কিছু ভুল
আমায় সে
চিনেছিল, আমিও
চিনেছি তাকে ব্রিজের তলায়,
কুন্দ ফুলের মালা গেঁথে দিয়েছি গলায়...
শেষবিকেলের কলকাতামুখী আপ ইএমইউ লোক্যাল ট্রেন। মাঝারি চাপের ভিড়। নানাশ্রেণির সাধারণ স্থানীয় যাত্রীদের ভিড়ই বেশি। তাছাড়া মহানগরবাসী কিছু ছোটো বা মাঝারি চাকুরিজীবী নিত্যযাত্রী শহরতলি থেকে যথাসম্ভব দ্রুত অফিস সেরে রোজকার মতো এইসময়ে যে যার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। বড় চাকুরিজীবী যে নেই তা নয় তবে তাঁরা স্বাভাবিক ভাবে সংখ্যায় কম।
অনেকের দেশ
থাকে, অনেকেরই
দেশ নেই কোনো।
স্বদেশ পেয়েছি কেউ? সে তো এক স্বপ্নে দেখা ছবি।
তোমার স্বদেশ আছে? নাকি শুধু
স্বপ্নে শোনা সুর!
নাকি দূর অতীতের মতন সুদূর!
কোথায় চলার পথের শেষ?
কতটুকু পথ পার হয়ে এলে বলতে পারো
আমার এই বেলার জীবনের পথ পেরুনো শেষ?
কী যে চেয়েছিলাম,
কেন যে চেয়েছিলাম
এখন আর তা মনে পড়ে না
ভুলতে ভুলতে এখন আমি ভুলে গেছি কোথায় আমার গ্রাম
কোথায় আমার ঠিকানা
কীভাবে আমি এখানে এসেছিলাম
